সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে মরদেহের ডিএনএ’র নমুনা সংরক্ষণে অবহেলার অভিযোগ ওঠেছে। অবহেলার কারণে সংরক্ষিত নমুনা পরীক্ষায় প্রায়ই আসছে ভুল রিপোর্ট। দায়সারা এবং ভুলভাবে মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করায় অনেক ক্ষেত্রেই মৃতদেহের সঠিক পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি পুরুষের ডিএনএ পাঠানো হলেও রিপোর্টে আসছে নারী হিসেবে।
ফরেনসিক ল্যাবরেটরি থেকে এমন তথ্য আসায় মামলা নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। এতে বিভিন্ন অপমৃত্যু ও হত্যা মামলার তদন্তে ব্যাঘাত ঘটছে। ভুল তথ্যের কারণে দীর্ঘ সময়েও অনেক মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছর চারটি মরদেহের ডিএনএ রিপোর্ট ভুল আসে। দেখা গেছে পুরুষের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে নারীর প্রোফাইল এসেছে। কোনোটিতে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রিপোর্টে কন্যাশিশুর প্রোফাইল এসেছে। এমন অসংগতির কারণে বিপাকে পড়তে হয়েছে পুলিশকে। সূত্রটি বলছে, নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম না মানার কারণেই ডিএনএ রিপোর্টে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগ ওঠার পর এ ভুলের জন্য কারা দায়ী তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
এই ভুলের জন্য দায়ী ডাক্তার না ডোম?
২০২০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ৪টি থানা থেকে উদ্ধারকৃত অপঘাতে নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তের জন্য হাসপাতাল মর্গ থেকে সংরক্ষিত ডিএনএর ফলাফল ভুল এসেছে। আর এতেই সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার ও ডোমের দায়িত্বে অবহেলার প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা সমালাচনা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রথম অভিযোগটি ওঠে ২০২০ সালে যমুনা নদী থেকে উদ্ধার করা একটি লাশ নিয়ে। সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশ যমুনা নদীর সয়দাবাদ এলাকা থেকে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পাঞ্জাবী ও লুঙ্গী পরা এক পুরুষের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। মর্গ থেকে ডিএনএ সংরক্ষণের আবেদন করে পুলিশ।
ডাক্তার ও ডোম মৃতদেহ থেকে ডিএনএর নমুনা সংরক্ষণ করে ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি অব বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডিতে পাঠান। দীর্ঘ ৫ মাস পর ডিএনএ ফলাফলে উল্লেখ করা হয় যে মৃতদেহটি একটি নারীর। অথচ মামলা সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র এবং প্রেরিত আলামতে অজ্ঞাত পুরুষ মানুষের মৃতদেহ হতে সংগৃহীত বলে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে একাধিকবার ডিএনএ পরীক্ষায় উক্ত আলামত হতে নারীর ডিএনএ প্রোফাইলই পাওয়া যায়। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে উল্লাপাড়া থানাতেও।
এছাড়া বেলকুচি ও রায়গঞ্জ থানাতেও এমন ভুল তথ্য এসেছে। যে কারণে এসব মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত আর মামলা পরিচালনা করতে অনেকটাই বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত সুইপার রানা হরিজন বলেন, আমিতো সুইপার, ডোম না। হাসপাতালে ডোম না থাকায় সুইপার হয়েও আমাকে ডোমের কাজ করতে হয়। ডাক্তাররা কখনই মৃতদেহ স্পর্শ করেন না। আমাকেই সব করতে হয়। যে কারণে ভুল হলে হতেও পারে।
ডাক্তাররা কেন এই আলামত সংরক্ষণে দায়িত্ব পালন করছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার ফরিদুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার সাইফুল ইসলাম জানান, এই ধরনের ভুল হওয়ার কথা না। তবে কেন এমন হলো তা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকের (আরএমও) সঙ্গেকথা বলে খতিয়ে দেখা হবে। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, গত বছরের ১ জুলাই বেলকুচি থানার একটি অজ্ঞাতনামা কিশোরীর লাশের বাবা-মা দাবি করে থানায় এজাহার করেন লালচান শেখ ও তার স্ত্রী পারভিন খাতুন। বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুলিশ ওই দু’জনের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠায়। প্রথম দফায় ডিএনএ নমুনার পরীক্ষার ফলাফলে নমুনাটি একজন প্রাপ্ত বয়স্কের বলে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ নিহত কিশোরীর মাথার খুলির পাজরের হাড়, দাঁত ও চুল কবর থেকে সংগ্রহ করে পুনরায় পাঠায়। একই সাথে পুনরায় লালচান শেখ ও তার স্ত্রী পারভিন খাতুনের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এই দম্পতির নমুনা সঠিকভাবে সংগ্রহ না করার কারণে ফরেনসিক বিভাগ তা গ্রহণ করেননি। একই সাথে ফরেনসিক কর্তৃপক্ষ পুনরায় মৃত ব্যক্তির ২ আত্মীয়ের নমুনা নতুন করে সংগ্রহ কিংবা তাদের সরাসরি ঢাকা পাঠানোর পরামর্শ দেন। যে কারণে মামলার তদন্ত বিঘ্নিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞরা জানান, মামলা নিষ্পত্তির জন্য মৃতদেহের পরিচয় জানা অত্যন্ত জরুরি। যে কারণে পুলিশ ডিএনএ রিপোর্টের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পরপর চারটি রিপোর্টে বিভ্রান্তিকর তথ্য আসায় পুলিশকে মামলা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে। তদন্ত কাজ এবং মামলা নিষ্পত্তিতেও বিঘ্ন ঘটছে। তিনি এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগকে কঠোর নজরদারির মধ্যে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ