গত ২৪ মার্চ মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সাত বছর বয়সী এক কন্যা শিশু নিহত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছিলেন, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে জানা-শোনার মধ্যে এটিই সবচেয়ে কম বয়সী ভুক্তভোগী। নিহত মেয়েটির পরিবার বলছে, সে তার বাড়ি মান্দালয় শহরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর হাতে অন্তত ৪৩ জন শিশু নিহত হয়েছে। শিশু অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের বরাতে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) এ খবর দিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের অবস্থাকে দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করেছে সংগঠনটি। এদিকে দেশটির স্থানীয় এক পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত মোট নিহত হয়েছে ৫৩৬ জন। সেভ দ্য চিলড্রেন সতর্ক করে বলেছে, সংঘর্ষে আহত শিশুদের সংখ্যা ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এও জানা গেছে, রাবার বুলেট দিয়ে এক বছর বয়সী শিশুকে চোখে আঘাত করা হয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলছে।
এদিকে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের দুই মাস পর চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস অবস্থানে অন্তত ৫৩৬ জন নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সাবেক রাজবন্দীদের প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (৩১ মার্চ) পর্যন্ত অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে জান্তা কর্তৃপক্ষের হাতে ৫৩৬ জন নিহত হয়েছেন। অপরদিকে বন্দী রয়েছেন দুই হাজার সাত শ’ ২৯ জন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, বুধবার রাতে মাগউই অঞ্চলের গ্যান্টগাও টাউনশিপে কালাই শহরমুখী রাস্তায় সামরিক বাহনকে আটকানো হলে জান্তা বাহিনী গুলি করলে অন্তত দুইজন নিহত হয়। সংস্থাটি আরো জানায়, জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর একটি জোট অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে যুক্ত বিবৃতির পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে ওই সংগঠনগুলোর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এতে বলা হয়, সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে এবং কয়েক জন সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত, এমনকি নিহত হয়েছে।
এর আগে ১৯৮৮ এবং ২০০৭ সালে দেশটির কয়েক দশকব্যাপী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ১৯৮৮ সালের বিক্ষোভে কমপক্ষে ৩,০০০ বিক্ষোভকারী মারা যায়, আর ২০০৭ সালে মারা গিয়েছিলেন ৩০ জন। দুই ঘটনাতেই হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
গত নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন দল এনএলডি পার্টি বিপুল ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর পার্লামেন্টে নতুন অধিবেশন শুরুর আগে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে দেশটির সেনাবাহিনী। এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশের ক্ষমতা কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইংয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর দখলে। এছাড়া আগামী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ