মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য লিখে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় কিশোরগঞ্জে আল-আমিন নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮মার্চ) গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে বিলপাড় গজারিয়া গ্রামের পাশের একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কটিয়াদী বিদ্যানিকেতনের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান শিকদার কটিয়াদী থানায় গত বছরের ২০ অক্টোবর মামলাটি করেন। মামলায় আসামি করা হয় বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড় গজারিয়া গ্রামের ২৫ বছর বয়সী আল-আমিন ও একই ওয়ার্ডের গজারিয়া গ্রামের ৫০ বছরের আবু জামানকে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, মিজানুর রহমান শিকদারের বাবা গিয়াসউদ্দীন শিকদার মারা যাওয়ার পর তার নামে বিভিন্ন ধরনের মানহানিকর মন্তব্য লিখে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে দেন আল-আমিন। আল-আমিনকে কাজটিতে উৎসাহ দেন আবু জামান। বিষয়টি নজরে এলে মিজানুর দুইজনকে আসামি করে কটিয়াদী থানায় মামলা করেন।
মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, তার বাবা এলাকার গণ্যমাধমকে ব্যক্তি ছিলেন। তিনি শিকদার মডেল একাডেমি নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও স্থাপন করেন। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই আসামি তার নামে বিভিন্ন মানহানিকর বক্তব্য দিতে থাকেন। এরপরই মামলাটি করেন তিনি।
গ্রেপ্তার আল-আমিনের বাবা আলাউদ্দীন গণ্যমাধমকে জানান, তার ছেলে সহজ-সরল ও বোকা ধরনের। অন্য মানুষজন যা বলে তাই শোনে। তিনি বলেন, ‘আল-আমিন ফেসবুকে কী সব লিখেছে বলে শুনেছি। সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করলে জানায়, সে চুল কাটার সময় অন্য একজনের কাছে মোবাইল ছিল। সেই নাকি তা করেছে। পরে শুনি তার নামে মামলা হয়েছে।’
আল-আমিন ডিগ্রি পাস হলেও মানসিকভাবে পরিপক্ব নন এবং মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান পিরিজপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বুলু মিয়া। কটিয়াদী থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহাম্মেদ বলেন, এই যুবককে গ্রেপ্তার করার পরে তার ছেলেমানুষী আচরণে আমরা অবাক হয়েছি।
মামলার অন্য আসামি আবু জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই মিজানুর রহমান তার নামে মামলা করেছেন। যে মেসেজগুলো ছড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং আল-আমিনকে কোনো দিন তিনি দেখেননি বলে দাবি করেন আবু জামান।
কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শাহাদাত হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, আল-আমিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেসেজগুলো বিভিন্ন মানুষের কাছে পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি যে কথাগুলো লিখেছেন তা আবু জামানের কাছ থেকে শুনেই লিখেছেন ও প্রচার করেছেন বলে জানান।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি মিডিয়া ওয়াচডগ বডি আর্টিকেল ১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯৮টি মামলায় ৪৫৭ জনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে ও গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ৪৫৭ জনের মধ্যে ৭৫ জন সাংবাদিক। তাদের মধ্যে ৩২ জনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।
ঘটনাক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আইনটি পর্যালোচনা করা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে তদন্তের আগেই যেন গ্রেফতার করা না হয়, এমন ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আইনটি নিয়ে বিতর্ক বা সমালোচনার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তির ওপর দেশে ও বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১১৪৭
আপনার মতামত জানানঃ