কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত রেইস গ্রুপেরও চেয়ারম্যান। সরাফাত বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী সরকারপন্থী ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন। তার বাড়ি প্রধানমন্ত্রীর জন্মস্থান গোপালগঞ্জে। সরাফত পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) চেয়ারম্যান এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডেরও পরিচালক।
শুধু তাই নয়, তিনি newsbangla24.com এর চেয়ারম্যানও। গতবছর ১ অক্টোবর বিকালে রাজধানীর বীর উত্তম রফিকুল ইসলাম অ্যাভেনিউয়ের নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ মাধ্যমটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফত।
চৌধুরী নাফিজ সরাফত বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো বাংলাদেশকে জানাব যে, একটা শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম আছে, যাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা স্বপ্ন ছিল আমরা মানুষের কথা বলব এবং আমরা সংবাদ মাধ্যমে আসব। এটা আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। এই যাত্রার শুরু আজকে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব দেখবে এই যাত্রাটা খুবই প্রাণবন্ত হয়েছে। আমরা সবাই মিলে এই যাত্রাকে আকর্ষণীয় করব।’
প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ী সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয়ের মদদে দুর্নীতির এক অন্য জগৎ তৈরি করেছেন। এক নজরে দেখে নেয়া যায় চৌধুরী নাফিজ সারাফাতের অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
গুলশানের একটি প্লট বাণিজ্যিকীকরণে দুর্নীতি
রাজধানীর গুলশানের ১০৩ নম্বর সড়কে একটি প্লটে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন তৈরির পায়তারা করেছিলেন চৌধুরী নাফিজ সরাফত। আলোচিত ওই ভবনে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হবার কথা ছিল। ওই প্লটের মালিক আঞ্জুমান আরা সাহিদ চৌধুরী। তিনি চৌধুরী নাফিজ সরাফতের স্ত্রী। এর আগে রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে একটি প্লট কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।
এই প্লটটি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে ধারণা করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মেনে শ্রেণি পরিবর্তন করে প্লটটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বরাদ্দ দেওয়ার কারণও জানতে চায় মন্ত্রণালয়। যদিও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা রাজউক নিয়ম ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করে।
রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিয়ম বহির্ভূত নির্দেশনা
রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা প্রথমে প্লটটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি না দিলেও পরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তা দিতে হয়েছে। এই প্লটটিকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
রাজউকের সূত্র মতে, ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ আঞ্জুমান আরা সাহিদ এ প্লটটি সাইদুর রহমান নামে একজনের কাছ থেকে কেনেন। তিনি ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই প্লটটির বাণিজ্যিকরণ এবং বাণিজ্যিক প্লটের মতো বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজউকে আবেদন করেন।
তবে এই প্লটটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে ‘বাণিজ্যিক ব্যবহারের আওতাভুক্ত নয়’ উল্লেখ করে আঞ্জুমান আরাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল রাজউক।
২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আঞ্জুমান আরাকে একটি চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই প্লটটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ‘অবকাশ নেই।’
কিন্তু ওই বছরের ৭ নভেম্বর রাজউকের ত্রয়োদশ সাধারণ সভায় প্লটটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যায় কি-না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আবার উপস্থাপন করা হয়।
ওই সভার কার্যপত্রে দেখা যায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে বাণিজ্যিক ব্যবহারে আওতাভুক্ত না হওয়ায় গুলশান আবাসিক এলাকার সিইএন (ডি) ব্লকের ১০২ ও ১০৩ নম্বর সড়কের বিভাজিত ২২/এ নম্বর প্লটটি ‘বাণিজ্যিকরণ ও বাণিজ্যিক প্লটের ন্যায় বাণিজ্যিক ‘ফার’সহ সকল সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে’ অনুশাসনের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজউকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে রাজউকের চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শ্যামলী নবী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে গুলশান আবাসিক এলাকার ১০২ ও ১০৩ নম্বর সড়কের ২২/এ প্লটকে বাণিজ্যিক প্লটের মতো সুবিধা দিতে বলা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, “যেহেতু গুলশান আবাসিক এলাকার ১০২ ও ১০৩ নম্বর সড়কের সিইএন (ডি) ব্লকের ২২/এ নম্বর প্লটের পাশে পিংক সিটিসহ অন্যান্য কয়েকটি প্লট বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এজন্য এ প্লটটিকেও আবেদন অনুযায়ী, প্রচলিত ফি আদায় সাপেক্ষে বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হোক মর্মে মাননীয় মন্ত্রী অনুশাসন প্রদান করেছেন।”
এরপর এক মাস পর ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি রাজউকের এস্টেট শাখা থেকে প্লটটি বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এই অনুমতি দেওয়া হল।
এই প্লটটিকে অনুমোদন দেওয়ার প্রসঙ্গে বর্তমান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
চৌধুরী নাফিজ সরাফতের বক্তব্য
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফত বলেন, ‘নিয়মকানুন মেনেই’ সেখানে ভবন তৈরির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
“আইন-কানুন ছাড়া কিছু হয় নাকি? এটা শতভাগ কমার্শিয়াল সড়ক করে দিয়েছে। এখন যারা ফিস দিবে তারাই কমার্শিয়াল করতে পারবে। এখানে কারও আপত্তি জানানোর কিছু নাই।”
পূর্বাচলে অনৈতিকভাবে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিকে প্লট বরাদ্দ রাজউকের
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মেনে শ্রেণি পরিবর্তন করে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে একটি প্লট কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১৭১ কাঠার প্লটটি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিকে বরাদ্দ দেয় রাজউক।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মূল অনুমোদিত নকশায় এ প্লটকে ‘সেকেন্ডারি স্কুল’ হিসেবে দেখানো হলেও প্লটের শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফত রাজউকে আবেদন করেন। তার আবেদনের পর ২৪ ডিসেম্বর রাজউকের স্থাপত্য শাখা থেকে প্লটের শ্রেণি ‘সেকেন্ডারি স্কুল’ পরিবর্তন করে ‘কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়’ করার বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের প্রস্তাব রাজউকের বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাজউকের বোর্ড সভায় ওই প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
হাই কোর্টের নির্দেশনায় বেঁকে বসে মন্ত্রণালয়
পূর্বাচল নিয়ে হাই কোর্টের কয়েকটি নির্দেশনার মধ্যে বিষয়টি নজরে আসার পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে রাজউকের চেয়ারম্যানকে এই প্লট বরাদ্দ নিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শ্যামলী নবীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, রাজউকের বোর্ড সভার ১৭.৩ নং সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের গোচরীভূত হয়েছে। এতে দেখা যায়, পূর্বাচল মডেল টাউনের মাস্টার প্ল্যানে ৯ নম্বর সেক্টরে হাইস্কুলের জন্য নির্ধারিত প্রায় নয় বিঘার প্লটটি নিয়ম বহির্ভূতভাবে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং প্লটটির শ্রেণির পরিবর্তন করা হয়েছে।
পূর্বাচলের প্লটের শ্রেণি পরিবর্তন না করার বিষয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়, রাজউকের চতুর্থ সংশোধনী পর্যন্ত এবং ৫ম সংশোধনীর প্রস্তাবিত আইকনিক টাওয়ার অংশটুকু মহামান্য হাই কোর্ট বিভাগের আদেশে বহাল রাখা হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনীর আইকনিক টাওয়ার ছাড়া অবশিষ্ট অংশ এবং পরবর্তী পরিবর্তনসমূহ উল্লিখিত আদেশের প্রেক্ষিতে মহামান্য উচ্চ আদালত কর্তৃক গৃহীত হয় নাই বিধায় বাতিলযোগ্য।
জানা যায়, মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সাতটি সংগঠনের দায়ের করা এক মামলায় ২০১৪ সালে হাই কোর্ট এক রায়ে পূর্বাচল প্রকল্পের জন্য রাজউকের চতুর্থ সংশোধনী লেআউট প্ল্যানের অনুমোদন দিয়েছিল। ওই রায়ের নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নতুন প্লট সৃষ্টির জন্য গত নভেম্বরে পঞ্চম সংশোধনী প্ল্যান অনুমোদনের জন্য আদালতে আবেদন করেছিল রাজউক। কিন্তু গত ১৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রাজউকের পঞ্চম সংশোধনী লেআউট প্ল্যানটি কার্যত বাতিল করে দেয়।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিকে দেওয়া প্লটের শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদন করার ঘটনাটি হাই কোর্টের আদেশের পরই ঘটে।
রাজউকের অনৈতিক হস্তক্ষেপ
জানা যায়, প্লটের শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য বোর্ড সভায় উপস্থাপনের জন্য দেওয়া কর্মপত্রে সই আছে রাজউক সদস্য আবুল কালাম আজাদের।
এ প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন, “কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির বিষয়ে আপনার এত আগ্রহের কারণ কী? এটা কি কোনো জাতীয় ইস্যু? আরও তো অনেক বিষয় আছে নিউজ করার মতো।”
রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ বলেন, “এ বিষয়ে (প্লটটি বরাদ্দ) আমি কিছুই জানি না। এজন্য এখন বলতে পারব না।”
রাজউকের ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ এর ওই বোর্ড সভায় তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) আমজাদ হোসেন খান, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. সাঈদ নূর আলম, সদস্য (পরিকল্পনা) আবুল কালাম আজাদ, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রোকন উদ দৌলা এবং সদস্য (উন্নয়ন) ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন চৌধুরী।
এদিকে গত ১২ মার্চ রাজউক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেয়, যাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি মন্ত্রণালয়। রাজউকের সচিব সুশান্ত চাকমা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, প্লটটির ক্ষেত্রে শ্রেণির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
উল্লেখ করা হয়, “পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের চতুর্থ মোডিফিকেশন অনুযায়ী ৯ নম্বর সেক্টরের ১০৭ নম্বর রাস্তার কমবেশি ১৭১.১৬ কাঠা আয়তনের ৬০ নম্বর প্লটটি ‘সেকেন্ডারি স্কুল’ ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত আছে। কর্তৃপক্ষের ১৯/২০১৮ তম সাধারণ সভার ১৭.৩ নং অনুচ্ছেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উক্ত প্লটটি একই ক্যাটাগরিতে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত) কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়।”
চিঠিতে যেহেতু সেকেন্ডারি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় দুটিই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত সে কারণে প্লটের শ্রেণির কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে যুক্তি প্রদর্শন করে রাজউক।
যদিও রাজউকের জবাব নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, “আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কীভাবে প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা জবাব দিয়েছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা এটি ফারদার দেখার জন্য আলাদা একটি ফাইল উপস্থাপন করেছি। এটা মন্ত্রী মহোদয় পর্যন্ত যাবে। তিনি অনুমোদন করলে আমরা এ বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখব।”
চৌধুরী নাফিজ সরাফতের বক্তব্য
এ প্রসঙ্গে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত দাবি করেন, ওই প্লট বরাদ্দ নিয়ে কোনো “অনিয়ম হয়নি। আপনার কাছে কী এমন জিনিস আছে যে এমন একটা ট্রান্সপারেন্ট জিনিস নিয়ে জানতে চাচ্ছেন?”
প্লট পাওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে নাফিজ সরাফত বলেন, “লটারি করার পর আমরা ওই প্লটটা পাই। ২০১৭ সালে টাকা দেওয়ার পরে আমাদের দলিল করে বুঝিয়ে দেয়।”
এ সময় ওই প্লটের শ্রেণি পরিবর্তন হয়নি বলে দাবি করে নাফিজ সরাফত বলেন, “ওই প্লটটা যখন বুঝে নিতে যাব, ইউজিসির একটা নিয়ম আছে যে মিনিমাম তিন একরের একটা রিকোয়ারমেন্ট আছে। ওইটা করতে যেয়ে ওরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্যাটাগরি চেঞ্জ হয় না। সেইম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থাকে। এটা রাজউকের আইন।”
তিনি আরও বলেন, “ওই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যেটা ইউজিসির সঙ্গে ম্যাচ করে এমন প্লট রাজউক আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। দ্যাটস ইট। এজন্য যেহেতু ওদের প্লটটা মিলে যায় ইউনিভার্সিটির সঙ্গে, এখানে কোনো আইন পরিবর্তন হয় না। তারা তাদের বোর্ডের মাধ্যমে আবার অনুমোদন করে দিয়েছে।”
জমির মূল্য পরিশোধে দুর্নীতি
সূত্র মতে, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি পূর্বাচলের ১৭১ দশমিক ১৬ কাঠার প্লটটি কাঠাপ্রতি ১৫ লাখ টাকায় বরাদ্দ পায়। তারা রাজউককে জমির দাম পরিশোধ করেছে ২৫ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
অথচ পূর্বাচলে মূল সড়কের পাশে বর্তমানে প্রতি কাঠা জমির মূল্য ৬০ লাখ টাকার কম নয়। ৬০ লাখ টাকা কাঠা ধরলেও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির পাওয়া প্লটটির দাম হয় ১০২ কোটি টাকার বেশি।
জমি বরাদ্দ নিয়ে দুর্নীতি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “এই জমিগুলো অধিগ্রহণ করা হয়েছে জনগণের সুবিধার জন্য। কিন্তু এগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়া কি সঠিক সিদ্ধান্ত হল?”
তিনি আরও বলেন, “মাস্টারপ্ল্যানে প্রাইমারি স্কুল, ইউনিভার্সিটি, সেকেন্ডারি স্কুলের জন্য জমি দেওয়া আছে। কিন্তু তারা সেকেন্ডারি স্কুলের জমি একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে… এই জিনিসটা অন্যায় হয়েছে।”
সরাফতের প্রভাবে দুর্ভোগের সপ্তমে বিডি নিউজ
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এলআর গ্লোবাল নামে একটি “শীর্ষস্থানীয় তহবিল ব্যবস্থাপনা কোম্পানি” থেকে ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ পায়।
এ প্রসঙ্গে এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম বলেন, “৩০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতো সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান আমি খুব কমই দেখেছি। বিডিনিউজের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের রয়েছে অপার সম্ভাবনা।”
যদিও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক জরুরী বৈঠক শেষে কমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে বিএসইসির মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত বিধিমালা লঙ্ঘন করায় ওই বিনিয়োগ চুক্তিটি স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
এরপর ওই বছর ৪ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে নোটিশ দিয়ে দুর্নীতির কিছু অভিযোগের বিষয়ে তথ্য জানতে চায়।
দুদকের একজন মুখপাত্র ওই সময় বলেন, জ্ঞাত উৎসের বাইরে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে খালিদীর সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। এরপর খালিদীর ব্যাংক একাউন্টগুলো জব্দ করা হয়। হঠাৎ করেই তার নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ বিপদে পড়ে যায়।
চৌধুরী নাফিজ সরাফতের হাতে কলকাঠি
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এলআর গ্লোবাল চুক্তি সম্পর্কে ওয়াকবিহল এমন বেশ কয়েকজন নিশ্চিভাবেই মনে করেন যে এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের পেছনে চৌধুরী নাফিজ সরাফতের হাত থাকতে পারে।
বিডিনিউজের চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, এমন একজন সরাফত সম্পর্কে বলেন, শেয়ারবাজার জগতে তার (সরাফত) বিশাল প্রভাব। এই খাতের সবাই “মনে হয় তাকে নিয়ে আতঙ্কিত।”
বিডিনিউজ এবং এলআর গ্লোবালের চুক্তি নিয়ে সরাফত বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন যে এলআর গ্লোবাল বিডিনিউজকে ব্যবহার করে তার ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে।
কারণ ২০১৯ সালের জুন মাসে (চুক্তি সই হওয়ার চার মাস আগে) বিডিনিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হিসেবে সরাফত কীভাবে নিজের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পূর্বাচলে একটি জমির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, যেটি মূলত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
এরপর বিডিনিউজ আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২১ অক্টোবর। প্রতিবেদনটিতে প্রতিবেদনে বলা হয় যে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারী নিয়মনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি আবাসিক এলাকার মধ্যে ২৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমতি পেয়েছে।
অন্য দুইটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ২২ ও ২৭ অক্টোবরে। সেই প্রতিবেদন দুটিতে বলা হয় যে রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ১০টি মিউচুয়াল ফান্ডের অবস্থা খারাপের দিকে ও এগুলোর মুল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে রেইস তাদের মিউচুয়াল অ্যাসেটের ৩৫% খুবই ঝুকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে, যা কোম্পাটিটির ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সাথে এক প্রকার প্রতারণার শামিল।
তৌফিক ইমরোজ খালিদীর মতামত
দুদকের তদন্তের ঘোষণার কয়েকদিন পরে বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক ও অন্যতম মালিক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “আমরা এমন সব প্রতিবেদন করেছিলাম যা প্রভাবশালী একটি মহলকে আঘাত করেছিলো। আমার সহকর্মীদের করা সেই সৎ ও আদর্শ প্রতিবেদনগুলোর মাশুল এখন আমাদের দিতে হচ্ছে। যদি তারা আমাদের প্রতিবেদনে কোনো ভুল বের করতে পারতো, তাহলে তো তারা মামলা করতে পারতো। তারা কেন মামলা করেনি? তারা কেন এই পথ অবলম্বন করেছে?”
সরাফতের ক্ষমতার উৎস
একজন পর্যবেক্ষক বলেন, “সরাফত খুবই ক্ষমতাশালী। তিনি নাম্বার ওয়ান, অর্থ্যাৎ প্রধানমন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠ। তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ আছে।”
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্বালে অর্থমন্ত্রীর ওপর প্রভাব খাটিয়ে তার কাছ থেকে রেইস অ্যাসেট ম্যনেজমেন্ট মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও “ক্লোজড এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড” পরিচালনা অব্যাহত রাখার অনুমতি আদায় করে নেয়। এই সিদ্ধান্তের কারণে সরাফতের কোম্পানির বিশাল লাভ হয়েছে।
কেননা, তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে এলে ক্লোজড এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেবার ক্ষেত্রে কোম্পানিটির সমস্যায় পড়ার শঙ্কা ছিল। কিন্তু এখন সেই ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া ছাড়াও, উল্টো অব্যাহত কমিশন প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। এই বিষয়ে একটি মামলা এখন হাইকোর্টে চলমান রয়েছে। রেইস ও বিএসইসি উভয়েই সেই মামলার বিবাদী।
রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট
ব্যবস্থাপনায় থাকা সম্পদের পরিমাণের দিক দিয়ে রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফার্ম। ঢাকার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১০টির সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আছে রেইস। এই দশ ফান্ডের মিলিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা, যার মালিক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
রেইস অ্যাসেট ম্যানেজেমেন্ট কোম্পানি যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। রেইস গ্রুপের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত পদ্মা ব্যাংকেরও (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) চেয়ারম্যান।
ঝুঁকিপূর্ণ খাতে লগ্নি
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম তাদের ব্যবস্থাপনায় থাকা তহবিলের ৩৫ শতাংশই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ খাতে লগ্নি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এর পুরোটাই বিনিয়োগ করা হয়েছে নন লিস্টেড কোম্পানিতে। যেখান থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংকে ৭০ কোটি ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগের পাশাপাশি রেইস একটি স্টক ব্রোকারেজ কোম্পানি ও বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বড় অংকের অর্থ খাটিয়েছে, যার পরিমাণ অন্তত ৮৭ কোটি টাকা। কেবল প্রিমিয়ার ব্যাংকের অনিবন্ধিত সিকিউরিটিজেই রেইস ৪৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। রেইসের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের তালিকায় বেস্ট হোল্ডিংয়ের কনভার্টিবল বন্ডও (বিএফআইএসপিভি) রয়েছে। এই নন লিস্টেড বন্ডে রেইস লগ্নি করেছে ২৫০ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকদের মন্তব্য
একজন বাজার বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত কোনো কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম যে ১০ টাকা অভিহিত মূল্য থেকে কমতে কমতে ৩ টাকার নিচে নেমে এসেছে, তার অন্যতম কারণ এই ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ।”
“এখন প্রশ্ন হল, এসব বিনিয়োগ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন পেল কীভাবে? ওই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার কোনো উদ্যোগ কি বিএসইসি নিয়েছে?”
আরেকজন বিশ্লেষক বলেন, “রেইসের মাধ্যমে যারা টাকা লগ্নি করেছেন, এই বিনিয়োগগুলোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে তারা প্রশ্ন করতেই পারেন। এসব ফান্ডের যে নেট সম্পদ মূল্য দেখানো হয়, তা সঠিক কিনা তা বোঝার জন্যও বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত তথ্য দেওয়া উচিৎ।”
তিনি বলেন, “এগুলো সরকারি ফান্ড নয়। যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এসব ফান্ডের শেয়ার মালিক, তারা এইটুকু অধিকার রাখে যে, তাদের লগ্নি করা টাকা খাটানোর সময় স্বচ্ছতা রক্ষা করা হবে; যে টাকা তারা বিনিয়োগ করেছেন, তার অপব্যবহার যেন না হয়, ফান্ড ম্যানেজার তা নিশ্চিত করবে।”
আরও বলেন, “লগ্নি করা টাকার অংকটা শুধু দেখুন; বাজারে এত ব্যাংক থাকার পরও তারা এরকম নতুন একটা ব্যাংকে (পদ্মা ব্যাংক) বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ড যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে, সেটা ভুলে যাওয়াটা কারো উচিৎ নয়।”
বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে আগে আমার জেনে নিতে হবে।”
বিএসইসির এমন ভূমিকার সমালোচনা করে দ্বিতীয় বাজার বিশ্লেষক বলেন, “এটা আরও খারাপ বিষয় যে বিএসইসি কার্যত ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে। এত টাকা বিনিয়োগ করার পরও ওই ব্যাংক এখনও সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এই খারাপ অবস্থার জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবস্থাপনা দায়ী। তারা বিনিয়োগকারীদের কথা না ভেবে উল্টা-পাল্টা বিনিয়োগ করেছে। আর যারা এ ধরনের বিনিয়োগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
রেইসের ১০ ফান্ডের দরই অভিহিত মূল্যের অর্ধেকের নিচে
রেইস অ্যাসেট ম্যানজেমেন্ট কোম্পানি যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। রেইস গ্রপের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত পদ্মা ব্যাংকেরও (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) চেয়ারম্যান। ঢাকার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে ৩৭টি। এর মধ্যে ১০টির সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আছে রেইস। এই ফান্ডগুলো যখন পুঁজিবাজারে এসেছিল, প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ছিল ১০ টাকা করে। দশটি ইউনিটের প্রত্যেকটির দর এখন পাঁচ টাকারও নিচে। কোনো কোনোটির দাম চার টাকারও কম।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এই খারাপ অবস্থার জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবস্থাপনা দায়ী। তারা বিনিয়োগকারীদের কথা না ভেবে উল্টা-পাল্টা বিনিয়োগ করেছে। আর যারা এ ধরনের বিনিয়োগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী রেইসের ব্যবস্থাপনায় থাকা ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) ১০ টাকা ২৫ পয়সা; অথচ মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৪ টাকা ৯০ পয়সায়।
ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩৯ পয়সা; শেষ লেনদেন হয়েছে ৪ টাকায়।
আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩০ পয়সা; লেনদেন হচ্ছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩২ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৪ টাকায়।
পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩৬ পয়সা; মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ২৯ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ২৮ পয়সা; শেষ লেনদেন হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সায়।
এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৫৩ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৪০ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩১ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৪ টাকা ৩০ পয়সায়।
বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি দেশের পুঁজিবাজারে যত বেশি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থাকবে সেই দেশের পুঁজিবাজার তত বেশি স্থিতিশীল হবে। বাংলাদেশে ঘটছে তার উল্টো।
রেইসের দশটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ৫ টাকার নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে নাফিজ সরাফাত বলেন, “এ বিষয়গুলো আমি দেখি না। আমার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন।”
আপনার মতামত জানানঃ