পাঁচজনই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক মামলায় একাধিকবার জেল খেটেছে। জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও তারা ফিরে গিয়েছিল পুরানো পেশায়। চুরি-ডাকাতি করে বেড়াতো ওরা। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোনভাবেই এদের থামাতে পারছে না। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ৫ সদস্যকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের একটি টিম গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীরর বিভিন্ন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মোর্শেদ ওরফে হাড্ডি মোর্শেদ, জাহিদ শেখ, আরমান হোসেন, কবির হোসেন মনা ও রাসেল। এসময় তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত ১টি বিদেশি রিভলবার, ৫০ রাউন্ড গুলি, স্বর্ণালংকার, লুন্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির ১৮ লক্ষ টাকা এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গ্রীল কাটার যন্ত্রপাতি, চাপাতি, চাকু ও রেঞ্চ উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাসে হঠাৎ করেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল। পরে গোয়েন্দা পুলিশের সকল ইউনিট একযোগে একাধিক অভিযান চালিয়ে চুরি-ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ও সংগঠিত অপরাধের আসামী হিসেবে ৫০ জনেরও বেশি চোর-ডাকাতকে গ্রেফতার করে। তবে বিশাল সেন্টারের হাতিরঝিল থানাধীন বিশাল সেন্টারের পেছনে ও হাজী পাড়ার দুটি বাসায় গ্রিল কেটে দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সদস্যরা প্রায় কোটি টাকার মালামাল নিয়ে গেলেও তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, গত বছরের ২০ অক্টোবর হাতিরঝিল থানার বিশাল সেন্টারের পিছনে এক বাসায় এবং ৮ ডিসেম্বর মিরেরবাগের এক বাসায় গ্রীল কেটে ডাকাতি হয়। এই ঘটনায় দুটিতে লাইসেন্সকৃত বিদেশি রিভলবার, ৫০ রাউন্ড গুলি, স্বর্ণালংকারসহ টাকা লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতদল। পরে থানায় মামলা হয়। আর গ্রেফতারকৃতরা গ্রীল কেটে ঘরে ঢুকে বাসিন্দাদের হাত পা বেঁধে ডাকাতি করে। আর এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় মো. সুমন (৩৯) নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাইকৃত দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা হয়। ঘটনাস্থলের সিসি টিভি ফুটেজের সহায়তায় অপরাধীদের অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা সবাই একাধিকবার জেল খেটেছে। জেল থেকে বের হয়ে তারা আবার ডাকাতি করছে। তিনি বলেন, জামিন পাওয়া প্রত্যেকের অধিকার। তবে বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হলে তাদের আর পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
সুত্র জানায়, ডাকাত দলের সদস্যরা হাড্ডি মোরশেদ ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তার নেতৃত্বেই হাজীপাড়া ও বিশাল সেন্টারের পেছনে ডাকাতি হয়। ডাকাতির আগে দিনে বাসাটি রেকি করে। গভীর রাতে মুখোশ পড়ে গ্রিল কেটে বাসায় প্রবেশ করতো। পরে বাসায় ঢুকে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে রাখতো। পরে আলমারী খুলে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বের হয়ে যেত।
গ্রেফতারকৃত মোরশেদের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে।১২-১৩ বছর বয়সে পালিয়ে ঢাকায় এসে ভাসমান থেকেই নেশায় আসক্ত হয়। নেশার জন্য চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতি করে। ২০১৬ সালে গ্রেফতার হয়। দুই বছরের মধ্যে জামিনে বের হয়ে পুনরায় ডাকাতি শুরু করে। গ্রেফতারকৃত কবির মনা খিলগাঁও, শান্তিবাগ ও শাজাহানপুরে ইয়াবার ব্যবসা করে। গাড়িচালক পেশার আড়ালে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করতো।
২০১৬ সালে গ্রেফতার হয়। পরে জেল থেকে বের হয়ে পুনরায় চুরি-ডাকাতি শুরু করে। ডাকাত দলের সদস্য জাহিদ উত্তরায় ভ্রাম্যমান হকারি করতো। নেশা করতে গিয়েই মোরশেদের সঙ্গে তার পরিচয়। তার কথায় ডাকাতিতে অংশ নেয়। ডাকাতির টাকা পেয়ে প্রথম দফায় ঋণ পরিশোধ করে। আর ৩ লাখ টাকা নিয়ে চাঁদপুরে যাওয়ার পথে ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়। আগে পল্টন থানায় চুরির মামলায় গ্রেফতার হয়। পরে ছাড়া পেয়ে পুনরায় ডাকাতি ও ছিনতাই করে।আর গ্রেফতারকৃত আরমান সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। সে রামপুরা এলাকায় থাকতো।
সেখানে রুবেল ও মোরশেদের হাত ধরেই ডাকাত দলে নাম লেখায়। ২০১৫ সালে ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয়। প্রায় আড়াই বছর জেল খেটে পুনরায় চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। হাতিরঝিলের ডাকাতির ভাগ পেয়ে সেন্টমার্টিন ঘুরতে যায়। সেখান থেকেই ফিরে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে বের হলে ডিবির হাতে ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয়।
ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারকারী গোয়েন্দা তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, এরা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। এরা চুরি-ডাকাতির অভিযোগে একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে আবার চুরি-ডাকাতি শুরু করে। এদের দলের আরও সদস্য রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনের সঠিক প্রয়োগ বাস্তবায়ন হলেই এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব। অপরাধীরা কিভাবে বার বার জামিনে বের হয়ে অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৩৩
আপনার মতামত জানানঃ