এক-দুই বছর নয়, ৩৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল বিশাল আকারের একটি উল্কাপিণ্ড। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক এর আঘাতে সৃষ্ট বিশাল গর্ত বা ক্রেটারের সন্ধান পেয়েছেন। তাদের দাবি সত্য হলে এটি হবে পৃথিবীর প্রাচীনতম গর্ত। সম্প্রতি নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত এই গবেষণাটি পৃথিবীর বুকে উল্কাপিণ্ডের আঘাত ও প্রভাবের ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে।
কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ও জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। গবেষকরা ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বছরের পুরোনো গর্তটি (ক্রেটার) আবিষ্কার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার পিলবারা অঞ্চলে। মূলত ‘শ্যাটার কোণ’ নামে পরিচিত স্বতন্ত্র এক প্রকার শিলার (রক ফরমেশন) উপস্থিতি থেকেই গর্তটি শনাক্ত করতে পেরেছেন গবেষকরা। উল্কাপিণ্ডের আঘাতে তীব্র চাপে তৈরি হয় ‘শ্যাটার কোণ’ শিলা।
গবেষকরা পিলবারা অঞ্চলে স্বতন্ত্র ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের এই শিলার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। এভাবেই আবিষ্কৃত হয়েছে পৃথিবীর প্রাচীনতম এই ইমপ্যাক্ট ক্রেটারটি (আঘাতজনিত গর্ত)।
গবেষকরা জানিয়েছেন, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মার্বেল বার থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পিলবারা অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া শ্যাটার কোণগুলো তৈরি হয়েছে এমন একটি উল্কাপিণ্ডের আঘাতে, যার গতি ছিল ঘণ্টায় ৩৬ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। উল্কাপিণ্ডটির প্রচণ্ড আঘাতে ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হয় বিশালাকার এক গর্ত (ক্রেটার) এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসাবশেষ।
এই উল্কাপিণ্ডের ইমপ্যাক্ট ক্রেটারের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এর আগের প্রাচীন ক্রেটারের তুলনায় সদ্য উন্মোচিত ক্রেটারটি ১০০ কোটি বছরের পুরোনো। অধ্যাপক ক্রিস কির্কল্যান্ডের মতে, উল্কাপিণ্ডের আঘাতের ফলেই হয়তো বিভিন্ন জীবাণুর (মাইক্রোবায়াল লাইফ) বেড়ে উঠার অনুকূল পরিবেশ যেমন গরম পানির পুল তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে জীবন কীভাবে শুরু হয়েছিল সে সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া যায়।
আপনার মতামত জানানঃ