ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর জের ধরে গাজা যুদ্ধ শুরুর এক বছর পূর্ণ হলো। বছর শেষে সেই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে আর যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হয়েছে।
ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণ ছিলো ইসরায়েলিদের জন্য ভয়াবহ একটি দিন। প্রায় বারশ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, নিহত হয়েছিলো। ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ফোন করে বলেছিলেন যে, “আমরা আমাদের রাষ্ট্রের ইতিহাসে কখনো এ ধরনের বর্বরতা দেখিনি”।
ইসরায়েলিরা হামাসের ওই হামলাকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছিলো। এরপর ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালায় যাতে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে তাদেরও বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক।
গাজার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ফিলিস্তিন গণহত্যার অভিযোগ এনেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ এরপর আরও ছড়িয়েছে। হামাসের হামলার ১২ মাস পর এসে মধ্যপ্রাচ্য এখন ভয়াবহ ও আরও ধ্বংসাত্মক একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে।
গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ
গত বছর ডিসেম্বরে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় হামাসের ব্যবহৃত ৮০০টির মত “সন্ত্রাসী টানেল” পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলো ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
আর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে” প্রায় দশ হাজারের মত বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে আইডিএফ। এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইসরায়েলকে।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ‘নিহত’ হওয়ার কথা সংগঠনটি জানায় ৩১শে জুলাই। ইরানের রাজধানী তেহরানে তার বাসস্থানে “জায়নবাদী গুপ্ত হামলায়” এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে তারা। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর তাকে হত্যা করা হয়।
ইসমাইল আবদেল সালাম হানিয়ে, যার ডাক নাম আবু আল-আবদ, জন্মেছিলেন ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে। তিনি হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সরকারের দশম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
অন্যদিকে শেখ হাসান নাসরাল্লাহ হলেন একজন শিয়া ধর্মপ্রচারক, যিনি ১৯৯২ সাল থেকে লেবাননের ইরানপন্থী শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
২৮শে অক্টোবর ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স দাবি করেছে যে বৈরুতে এক হামলায় হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে পহেলা অক্টোবর থেকে ইসরায়েল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে স্থল অভিযান শুরু করেছে বলে জানায় তাদের ডিফেন্স ফোর্স আইডিএফ।
যেসব জায়গায় হামলা হচ্ছে সেগুলো ইসরায়েলি কমিউনিটির জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করে তারা। গত এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলায় কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলে ৩০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইরান। ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে এটিই ছিলো ইরানের প্রথম সরাসরি হামলা।
সেসময় প্রায় সবগুলো ড্রোনই ভূপাতিত করেছিল ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের আরব মিত্ররা। ঐ হামলায় ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জবাবে তখন ইরানের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
এরপর চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে আবারো শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মূলত হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার জেরে এই হামলা করে ইরান।
হামলার পর ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফারণের শব্দ শোনা গেছে এবং ইরানের মিসাইল নিক্ষেপের কথা জানিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
তারা বলেছে, প্রায় ১৮০টি মিসাইল ছোড়া হয়েছে এবং অনেক মিসাইল ভূপাতিত করা হয়েছে, তবে মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলে ‘কিছু আঘাতের’ ঘটনাও ঘটেছে। ইরানকে এই হামলার ‘পরিণাম ভোগ করতে হবে’ বলেও হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।
লেবাননে ব্যাপক হামলা
হেজবুল্লাহ স্থাপনা লক্ষ্য করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। পহেলা অক্টোবর হামলা শুরুর আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বৈরুতে শহরের তিনটি এলাকা থেকে স্থানীয় অধিবাসীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বলেছেন এই হামলার কারণে অন্তত দশ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। হেজবুল্লাহর ডেপুটি কমান্ডার নাইম কাসেম বলেছেন ইসরায়েলের স্থল অভিযানের জন্য তারা প্রস্তুত এবং এই যুদ্ধ ‘দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে’
আপনার মতামত জানানঃ