সরকারি নির্দেশনায় জমি রেজিস্ট্রি করতে বিক্রয় মূল্যের সাড়ে সাত শতাংশ টাকা রাজস্ব হিসেবে জমা দিতে হয়। কিন্তু সোনাগাজী পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন সরকারের এই রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার স্বার্থে এক অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। এতে মেয়র খোকন সরকারের ছয় লাখ ১৬ হাজার ছয় শ আট টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। তার এই প্রতারণার সাথে সহযোগী হিসাবে সাবরেজিস্ট্রার ও তার অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামও এসেছে।
গত ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাব-রেজিস্ট্রার আমির হামজার স্বাক্ষরিত দলিলের তথ্যে জানা যায়, সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতলী মৌজার ২৪ শতক নাল জমিকে ডোবা দেখিয়ে বিক্রি করা হয়। জমির ক্রেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন। আমমোক্তারনামা দলিলে মেয়রের কাছে জমিটি বিক্রি করেন তার স্ত্রী।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুলাখালী গ্রামের নাজমুল হুদা চৌধুরীর মালিকানাধীন ৩৯৬ নম্বর খতিয়ানভুক্ত পৌরসভার তুলাতুলি মৌজার ২৪ শতক নাল জমি তার স্ত্রীকে দানপত্র করেন। জমিটি নিজ নামে নামজারি করে ৮৮৯ নম্বর খতিয়ানভুক্ত করেন। ২০ জুন ২০১৭ সালে উক্ত জমি মতিগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ৩৩৫৭ নম্বর দলিলে সোনাগাজী পৌর মেয়রের স্ত্রীর নিকট অফেরতযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল মূলে হস্তান্তর করা হয়। পরে ৪৪১২/১৮ দলিলে ২৪ শতক নাল জমি সাফ কবলায় তার স্বামী পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনের কাছে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় নাল জমিকে ডোবা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মতিগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের তথ্যমতে, হালনাগাদ সরকারি মূল্য তালিকা অনুযায়ী সোনাগাজী পৌরসভার তুলাতুলি মৌজার প্রতি শতক নাল জমির বিক্রয় মূল্য ৩ লাখ ৪২ হাজার পাঁচ শ ষাট টাকা ও ডোবা জমির মূল্য ৪০ হাজার সাত শ একাত্তর টাকা। সেই হিসেবে ২৪ শতক নাল জমির বিক্রয়মূল্য হবে ৮২ লাখ ২১ হাজার চার শ ষোলো টাকা। সরকারি নির্দেশনায় জমি রেজিস্ট্রি করতে বিক্রয় মূল্যের সাড়ে সাত শতাংশ টাকা রাজস্ব হিসেবে জমা দিতে হয়। সেই হিসেবে নাল জমিকে ডোবা দেখিয়ে বিক্রয় মূল্য কমিয়ে রেজিস্ট্রি করে মেয়র খোকন সরকারের ছয় লাখ ১৬ হাজার ছয় শ আট টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রভাব ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল ১১৮৫নং খতিয়ানে ২৪ শতক জমি পুনরায় নাল হিসেবে নিজ নামে নামজারি করে নেন। আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে দলিলে জমিটির প্রকৃত শ্রেণি কী রয়েছে তা কোনো প্রকার যাচাই- বাছাই না করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন আক্তার, পৌর ভূমি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছ, সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান, কানুনগো টিনোদ বিহারি চাকমা মেয়র খোকনের অবৈধ কাজে সহযোগিতা করেন।
জানা যায়, গত নির্বাচনের সময় মেয়র হলফনামায় যে পরিমাণ সম্পত্তি উল্লেখ করেছেন, তা বর্তমানে বেড়ে কয়েকশ গুণ হয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি নোটিশ দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে খোকনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলেও প্রভাবশালী মহলের তদবিরে পরবর্তী তদন্ত থেমে যায় বলে দাবি করেন তারা।
মেয়র খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে জমি নিবন্ধন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তার জন্য আমি দায়ী না, দায়ী সাব-রেজিস্ট্রার। কারণ তিনি জমি রেজিস্ট্রি করেছেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, রফিকুল ইসলাম খোকন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের তথ্য গোপন করতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেন। এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল হিসাবে মেয়র এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ