পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর মামলার পাল্লা দিনদিন বেড়েই চলছে। মামলার বিচারে সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের চেয়ে পুলিশও কম যান না। একেরপর এক অভিযোগ ও মামলার তরী ভিড়ছে পুলিশ বাহিনীর দোরগোড়ায়। এবার দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের দায়ে কুষ্টিয়ায় স্ত্রীসহ এক পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক তহিদুল ইসলামের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী পরিচালক নাছরুল্লাহ হোসাইন।
মামলায় অভিযুক্ত হলেন- গাংনী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং বর্তমানে রাঙামাটি জেলার পুলিশ বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (পিএসটিএস) কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক হরেন্দ্রনাথ সরকার (৫৩) এবং তার স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী অধিকারী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিলের মধ্যে বিভিন্ন সময় পুলিশ পরিদর্শক হরেন্দ্রনাথ সরকার আইন বহির্ভূত ও অবৈধ পন্থায় ২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৮৪ টাকা এবং তার স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী অধিকারী ৩২ লাখ ৮০হাজার ৭০৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার তদন্তকারী দলের তদন্তে অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এতে দুদক আইনের ২৬ (২), ২৭ (১) ও মানি লন্ডারিং আইনের ৪ (২ ও ৩) ধারায় সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য মনে করায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপ সহকারী পরিচালক নাছরুল্লাহ হোসাইন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে নিশ্চিত করেন দুদক কুষ্টিয়ার লিগ্যাল অফিসার বাসেদ আলী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, হ্যাঁ এর আগে দুদক এ বিষয়ে একটা তদন্ত করেছিল। তবে মামলা দায়েরের বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, উনারা তো আমার ফাইলপত্রও ঠিকভাবে দেখে নাই। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেয় নাই। উনারা আন্দাজে কীভাবে আমার এবং আমার স্ত্রীর নামে মামলা করলেন আমি বুঝলাম না।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িয়ে আছে দেশের অধিকাংশ পুলিশ সদস্যই। থানা প্রশাসনগুলো এমনি এক অবস্থানে চলে গেছে যে, আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ব্যতিত লোকজনের সহায়তা ও পাশে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও, এখন সেসব করতে লোকজনকে মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হয়। আর থানা প্রশাসনের পুলিশ সদস্যরা আর্থিক সুবিধা না থাকলে সেদিকে হাঁটতেও চান না। প্রতিটা মামলার পেছনেই ভুক্তভোগীকে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এটা এক রকম অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে থানা প্রশাসনগুলোর। যার ফলে দরিদ্ররা নির্যাতিত হলেও থানার দিকে পা বাড়াতে চান না। অর্থের বিনিময় বাদেও পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে হয়রানি ও অসদাচরণের মতো গুরতর অভিযোগ। সাধারণ লোকদের সাথে তাদের আচরণ সন্ত্রাসী কিংবা স্থানীয় মাস্তানদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। থানা পুলিশের এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ লোকজন মামলা নিয়ে থানায় যেতে সাহস পান না। থানা প্রশাসন এখন দুর্বৃত্ত ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের আখড়া হয়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৪
আপনার মতামত জানানঃ