এ হৃষ্টপুষ্ট ডাইনোসরটি বর্তমানে ‘কম্পটোনাটাস চেসেই’ নামে পরিচিত, যা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি বছর আগে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে ঘুরে বেড়াত।
এক শতাব্দীর মধ্যে এই প্রথম পুরো একটি ডাইনোসরের জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ইংল্যান্ডের ‘আইল অফ উইট’ দ্বীপে আমেরিকান পুরুষ বাইসনের সমান বড় এক তৃণভোজী ডাইনোসরের জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে, যেটির হাড়ের সংখ্যা মোট ১৪৯টি।
এ হৃষ্টপুষ্ট ডাইনোসরটি বর্তমানে ‘কম্পটোনাটাস চেসেই’ নামে পরিচিত, যা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি বছর আগে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে ঘুরে বেড়াত। আর এর ভর ছিল আফ্রিকার হাতির সমান।
প্রায় সাত হাজার বছর আগে নিজের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল ‘আইল অফ উইট’ দ্বীপটি।
“এটি হয়ত ঝাঁক বেঁধে চলা একটি প্রাণী ছিল। আর প্লাবনভূমিতে শিকারিদের ভয়ে এই হৃষ্টপুষ্ট ডাইনোসরের পাল সম্ভবত এলোমেলোভাবে এদিক ওদিক চলে গেছে, এমন সম্ভাবনাও আছে,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথ’-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী জেরেমি লকউড।
এটি এক তৃণভোজী ডাইনোসর শ্রেণির অন্তর্গত, যা ‘ইগুয়ানোডন্টিয়ান’ নামে পরিচিত। আকারে বড় ও হৃষ্টপুষ্ট এই ডাইনোসরটিকে প্রায়শই ‘ক্রিটেসিয়াস যুগের গরু’ বলে উল্লেখ করে থাকেন জীবাশ্মবিদরা।
এর প্রথম সন্ধান পেয়েছিলেন জীবাশ্মবিদ নিক চেজ, যিনি কোভিড-১৯ মহামারীর ঠিক আগেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর তার নামানুসারেই প্রজাতিটির এমন নামকরণ হয়েছে বলে প্রতিবদেন লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
এর প্রাপ্ত জীবাশ্মের নমুনা বিশ্লেষণের জন্য লকউড ও তার সহকর্মীদের বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছে।
“ছয় বছর আগে আমরা এ ডাইনোসরের জীবাশ্মের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করি। আর এটা আমার পিএইচডি থিসিসেরও অংশ ছিল, যা শেষ করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছে,” বলেছেন লকউড।
“ফলে, জীবাশ্মের খোঁজ থেকে এ গবেষণা প্রকাশ করার যাত্রাটি বেশ দীর্ঘ ছিল।”
চেজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লকউড বলেন, “ডাইনোসরের হাড় খুঁজে পাওয়ার বেলায় নিকের নাক অনেক প্রখর ছিল।”
“আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন, চেজ প্রতিদিনই জীবাশ্ম সংগ্রহ করে সেগুলো বিভিন্ন জাদুঘরে দান করে দিতেন।”
এর আগে ইউরোপের সবচেয়ে বড় আকারের স্থলভিত্তিক শিকারী ডাইনোসরের দেহাবশেষও খুঁজে পেয়েছিলেন নিক চেজ, যা সবার সামনে এসেছে গত বছর।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইল অফ উইট জীবাশ্মবিদদের জন্য স্বর্গে পরিণত হয়েছে, এখানে গত পাঁচ বছরে আটটি বিলুপ্ত প্রজাতির সন্ধান মিলেছে।
সর্বশেষ এ ‘চমকপ্রদ সন্ধান’ থেকে ইঙ্গিত মেলে, একসময় ‘বিশ্বের অন্যতম বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র’ ছিল দক্ষিণ ইংল্যান্ড।
এদিকে, ‘আইল অফ উইটকে ‘যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী ডাইনোসরদের জীবাশ্ম সাইট’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম।
গত বছর দ্বীপটিতে একটি নতুন প্রজাতির ডাইনোসর পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া, চার বছর আগে ‘টিরানোসরাস রেক্স’ ডাইনোসরের পরিবারের একটি নতুন প্রজাতির হাড়ের সন্ধান পেয়েছিলেন দুই জীবাশ্মবিদ।
এমনকি ২০২১ সালেও দুটি বড় শিকারি প্রজাতির ডাইনোসরের সন্ধান পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে তারা একটির নাম দিয়েছেন ‘শিংওয়ালা কুমিরমুখো হেল হেরন’ বা ল্যাটিন ভাষায় ‘সেরাটোসুচপস ইনফেরোডিওস’।
আপনার মতামত জানানঃ