মহাসাগরে প্রায় ২০ লাখ প্রজাতির প্রাণীর বাস বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ২ লাখ ৩০ হাজার প্রজাতির ব্যাপারে জানেন তাঁরা। তাহলে বাকি প্রজাতিগুলো কোথায় গেল? লুকিয়ে আছে মহাসাগরের কোনো রহস্যময় স্থানে? থাকতেই পারে।
কারণ, আমরা ভূপৃষ্ঠের নিচের চেয়ে ওপরের খবর ভালো জানি। সমুদ্রের তলদেশের চেয়ে আমাদের কাছে মঙ্গল ও শুক্র গ্রহের ভালো মানচিত্র রয়েছে। তাই সমুদ্রের তলদেশ আমাদের কাছে প্রায় অজানাই রয়ে গেছে। আজ সেরকম পাঁচটি অজানা ও রহস্যময় স্থান নিয়ে আমাদের আলোচনা।
রস আইস শেলফ
অ্যান্টার্কটিকার সবচেয়ে বড় আইস শেলফ বা বরফের চাঁইয়ের নাম রস আইস শেলফ। এর আয়তন প্রায় ৫ লাখ ৮০০ বর্গকিলোমিটার। প্রায় ৮০০ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে এই শেলফ। কিছু সাহসী গবেষক দল এই এই বরফের মধ্যে কয়েক শ মিটার ড্রিল করেছেন। তাঁরা মাছ ও কিছু রহস্যময় সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজাতি খুঁজে পেয়েছেন। পানির নিচে এমন একটা মাছ দেখেছেন, যেটি উল্টোভাবে সাঁতার কেটে চলে। আগে কখনো পৃথিবীতে এমন মাছ দেখা যায়নি। তবে গবেষকেরা কীভাবে সেখানে পৌঁছেছিলেন এবং বেঁচে ছিলেন, তা এখনো রহস্য। ভবিষ্যতে এখানে আবার যেতে চান গবেষকেরা।
গাকেল শৈলশিরা
গ্রিনল্যান্ড এবং সাইবেরিয়ার মধ্যবর্তী আর্কটিক মহাসাগরের ইউরেশীয় অববাহিকায় অবস্থিত এই শৈলশিরা। মহাসাগরে অনেক জায়গায় হঠাৎ হঠাৎ উঁচু পর্বতের মতো দেখা যায়। ওগুলোই শৈলশিরা। এই শৈলশিরাটি প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রায় ৫ কিলোমিটার গভীর। এই শৈলশিরার সব কোণায় যে এখনো বিজ্ঞানীরা পৌঁছাতে পারেননি, তা বললে নিশ্চয়ই অবাক হবে না।
গবেষকদের ধারণা, এই শৈলশিরায় এমন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে, যা পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ২০০৭ সালে এই রিজ বা শৈলশিলায় বিজ্ঞানীরা একটা মিশন পরিচালনা করেছিলেন। সেই মিশনে তাঁরা প্রচুর আগ্নেয়গিরির লাভা দেখতে পেয়েছেন। দেখে মনে হয়ে, কাচ দিয়ে সমুদ্রের তলদেশটা কেউ তৈরি করে রেখেছে। পরে তাঁরা একটা ডুবো রোবট সেখানে পাঠিয়ে অনেক নতুন প্রজাতির সামুদ্রিক জীবের সন্ধান পান।
গ্রিনল্যান্ডের প্রবাল প্রাচীর
২০১২ সালে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে এক জায়গায় ৯০০ মিটার নিচে পানির নমুনা সংগ্রহ করতে যান একদল তরুণ গবেষক। পানির নমুনা পরীক্ষা করতে ৯০০ মিটার গভীরে পাঠায় কিছু যন্ত্র। সময় মতো যখন যন্ত্রগুলো ওপরে ওঠানো হয়, গবেষকেরা আঁতকে ওঠেন। তাঁদের যন্ত্রগুলো ভেঙে গেছে। যদিও এ রকম হওয়ার কথা না। যন্তগুলোর সঙ্গে প্রবাল আটকে থাকতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়, সম্ভবত পানির নিচে প্রবাল রয়েছে। সাধারণত এত গভীরতার পানি হয় শীতল। আর শীতল পানিতে প্রবাল থাকে না। বিষয়টা পরীক্ষা করার জন্য তাঁরা একটা ক্যামেরা পানির নিচে ছেড়ে দেন। দুর্ভাগ্যবশত সে ক্যামেরাও আটকে যায়। অনেক কষ্টে তা উদ্ধার করে দলটি।
তারপর ছবি দেখে নিশ্চিত হন যে, সেখানে সত্যিই শীতল পানির প্রবাল রয়েছে। ফলে এই প্রবালটি কীভাবে সূর্যের আলো ছাড়া অত গভীরে বেঁচে আছে, তা একটা রহস্য। গবেষক দলের দাবি, সেখানে আরও এমন প্রাণী থাকতে পারে, যেগুলো সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই।
টোঙ্গা ট্রেঞ্জ
গভীরেটোঙ্গা ট্রেঞ্জ দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি খাত। মারিয়ানা ট্রেঞ্জ পৃথিবীর গভীরতম খাত। এর পরেই টোঙ্গা ট্রেঞ্জের অবস্থান। ১ হাজার ৩৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাতের গড় গভীরতা প্রায় ২০ হাজার ফুট। তবে সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ৩২ হাজার ৭০০ ফুট। এই বিশাল খাতটি খুঁজে পাওয়া গেছে ১৯৫২ সালে। এই গভীরতায় এমন প্রজাতির জেলিফিশ থাকতে পারে, যা আগে কখনো আবিষ্কার হয়নি।
সিলফ্রা ফিশার
এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে ডুব দিলে তুমি একসঙ্গে দুটি মহাদেশের ফাটলের মধ্যে সাঁতার কাটতে পারবে। আসলে ডুব দিয়ে দুই মহাদেশের পাড় ছুঁতে পারবে। কারণ, সিলফা ফ্রিশার হলো উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশের মধ্যবর্তী একটা ফাটল। এখানেই এই দুই মহাদেশীয় প্লেটগুলো মিলিত হয়। ফাটলটি প্রতিবছর প্রায় ২ সেন্টিমিটার করে বাড়ে। এখানকার পানি খুবই স্পষ্ট। নিচের দিকে তাকালে প্রায় ১০০ ফুট পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। এখানকার পানির তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর পানি এত পরিষ্কার যে তুমি পান করতেও পারবে। এটি মোটামুটি ৬৩ মিটার গভীর। তবে সেখানে কাউকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। কারণ, দুই পাশের পাথরগুলো যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাছাড়া ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তো রয়েছেই। এই ফাটলে থাকতে পারে আমাদের অজানা, অচেনা কোনো প্রাণী।
আপনার মতামত জানানঃ