সম্প্রতি পৃথিবীর ‘কাছাকাছি’ প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে এমন এক নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
‘গ্লিস ১২বি’ নামের নতুন গ্রহটির তাপমাত্রা প্রায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার মানে, বাসযোগ্য হতে পারে গ্রহটি। মূলত কয়েকটি পরিচিত গ্রহের মধ্যে একটি ‘গ্লিস ১২বি’, যেখানে মানুষের পক্ষ্যে বেঁচে থাকা তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
“এটি মানুষের জন্য অস্বস্তিকর হলেও যেভাবে আমরা ‘বাসযোগ্যতা’র বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করি তা হল, গ্রহের পৃষ্ঠে তরল পানির উপস্থিতি, যা এ নতুন গ্রহটিতে থাকতে পারে,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গ’-এর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী ল্যারিসা প্যালেথর্প।
প্যালেথর্প ও গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের এক গবেষণা দল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ‘ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ বা ‘টিইএসএস’ নামে পরিচিত স্যাটেলাইটটিকে ব্যবহার করে তারা প্রদক্ষিণকারী নতুন এ গ্রহটিকে শনাক্ত করেছেন।
নতুন গ্রহটির আকার, তাপমাত্রা ও এটি কীভাবে চলাচল করে তা হিসাব করতে গবেষকদের এক বছরেরও কম সময় লেগেছে।
“ছোট আকারের এমন বিভিন্ন গ্রহ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন,” বলেছেন প্যালেথর্প।
“পৃথিবীর কাছাকাছি আকারের গ্রহ সম্পর্কে আমরা আরও জানতে চাই, যাতে আমরা বুঝতে পারি পৃথিবীর বাইরে আরও কতগুলো পৃথিবী রয়েছে।”
“এত কাছাকাছি দূরত্বে গ্রহটিকে শনাক্ত করা সত্যিই রোমাঞ্চকর। কারণ, এটি আমাদের বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে সহায়ক হবে, ফলে আমরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আরও অনেক কিছু শিখতে পারব।”
মহাকাশের দিক থেকে বিবেচনা করলে ‘গ্লিস ১২বি’ গ্রহটি কেবল ২০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। তবে, প্যালেথর্পের মতে, বর্তমানে সেখানে যেতেও আমাদের সবচেয়ে দ্রুতগতির স্পেসশিপটির প্রায় তিন লাখ বছর সময় লাগবে।
শুক্র গ্রহের সমান আকারের এ গ্রহটি প্রতি ১২.৮ দিনে এর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। সূর্য, যাকে ‘গ্লিস ১২’ নামে ডাকা হয়, এটি মীন রাশিতে অবস্থিত একটি শীতল লাল বামন।
“এখন আমরা যে আলো দেখতে পাচ্ছি তা ৪০ বছর আগের, এর থেকে বোঝা যায় সূর্যের আলো পৃথিবীতে আমাদের কাছে পৌঁছাতে কত সময় লাগে,” বলেছেন যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারউইক’-এর অধ্যাপক টমাস উইলসন।
“গ্লিস ১২বি-এর মতো গ্রহগুলো খুব কম থাকায় ও এদের মধ্যকার দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ার কারণে, আমাদের জন্য গ্রহটিকে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করতে পারা এবং এর বায়ুমণ্ডল ও তাপমাত্রা সম্পর্কে জানতে পারা বেশ কঠিন।”
এ গবেষণার পরবর্তী ধাপে গবেষকরা এ নতুন গ্রহের বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা করে দেখবেন গ্রহটির সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কোনো মিল আছে কি না।
“গ্রহটিতে বায়ুমণ্ডল নাও থাকতে পারে। যার মানে হবে, এটি বাসযোগ্য নয়,” বলেছেন প্যালেথর্প।
“বাসযোগ্যতার জন্য আদর্শ হল, পাতলা স্তরের বায়ুমণ্ডল। কারণ, ঘন বায়ুমণ্ডলওয়ালা গ্রহের উষ্ণতা বেশি হতে পারে। এটি মেঘের মতো হতে পারে, ঝাপসা হতে পারে আবার এমনও হতে পারে এর কোনো বায়ুমণ্ডলই নেই।”
আপনার মতামত জানানঃ