হেলিওপজ মূলত হেলিওস্ফিয়ারের প্রতিরক্ষা বা ঢালের শক্তির পরিমাণকে বোঝায়। যেটি ছাড়া মহাজাগতিক বিকিরণ ‘গ্যালাকটিক’ একেবারে বাধাহীন।
সৌরজগতের শেষ সীমা হচ্ছে সূর্যের সবচেয়ে বাইরের বায়ুমণ্ডলীয় স্তর। একে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘হেলিওস্ফিয়ার’ আর এর সীমানাকে বলা হয় ‘হেলিওপজ’।
হেলিওপজ সৌরজগতের সে অঞ্চলকে চিহ্নিত করে, যেখানে এক আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম সৌরজগৎ থেকে বাইরে যেতে চাওয়া বাতাসকে আটকে দেয়।
ভয়েজার ১ ও ভয়েজার ২ নামের দুটি নভোযান হেলিওপজে ভ্রমণ করলেও হেলিওপজের ব্যাপ্তি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা।
তবে, বিজ্ঞানীদের একাংশ এ অঞ্চল সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী, যার জন্য তারা একটি মিশনের ধারণা তৈরি করছেন।
সৌরজগতে হেলিওস্ফিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর বিভিন্ন ক্ষতিকর মহাজাগতিক বিকিরণের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে এটি। এর মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী কোনও সুপারনোভা থেকে আগত বিকিরণও।
হেলিওস্ফিয়ার ও হেলিওপজের আকার এবং ব্যাপ্তি এখনও বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। নতুন এক গবেষণায় এর প্রয়োজনীয় উত্তর খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানীরা এমন এক ব্যবস্থা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন, যা দিয়ে এ অঞ্চলের বাইরেও ভ্রমণ করা যাবে।
‘কমপ্লিপেন্টারি ইন্টারস্টেলার ডিটেকশন ফ্রম দ্য হেলিওটেইল’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স’-এ, যেটির প্রধান লেখক ‘মিশিগান ইউনিভার্সিটি’র জলবায়ু, মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের পোস্টডক্টরাল ফেলো সারাহ স্পিটজার।
“এমন মিশন ছাড়া আমরা ‘গোল্ডফিশের এমন পাত্র’ হিসেবে থেকে যাবো, যারা ভেতর থেকেই সবকিছু বোঝার চেষ্টা করছে,” বলেছেন স্পিটজার।
সৌরজগতের ভেতরে থাকা সবকিছুকেই মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে হেলিওপজ, এমনকি পৃথিবীর ঢাল হিসেবে কাজ করা চুম্বকমণ্ডল ছেড়ে যাওয়া নভোচারী’সহ সবকিছুকেই।
“আমরা জানতে চাই হেলিওস্ফিয়ার কীভাবে ক্ষতিকারক গ্যালাকটিক বিকিরণ থেকে মহাকাশচারী ও জীবনকে রক্ষা করে। তবে, আমরা যেহেতু এখনও সেই ঢালের আকৃতি সম্পর্কে জানি না, তাই এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন, বলেন এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘বস্টন ইউনিভার্সিটি’র গবেষক মার্ক কর্নব্লিউথ।
সূর্যের সৌর বায়ু ও স্থানীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের (এলআইএসএম) সংঘর্ষ থেকে হেলিওস্ফিয়ারের আকৃতি গঠিত হয়। মূলত বিভিন্ন প্লাজমা, ধূলিকণা ও নিরপেক্ষ কণা থেকে তৈরি হয় এলআইএসএম।
এলআইএসএম-এর স্থানীয় ‘ইন্টারস্টেলার ক্লাউড’ ও ‘জি-ক্লাউড’ নামের দুটি মেঘ মহাকাশ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে থাকে, যার অবস্থান সৌরজগতের বাইরে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী নক্ষত্রপুঞ্জ ‘আলফা সেঞ্চুয়ারি’ সিস্টেমে।
“ভবিষ্যত ইন্টারস্টেলার মিশন বাস্তবায়ন সম্ভব হলে তা হেলিওস্ফিয়ার ও আমাদের আশ্রয়স্থল অর্থাৎ পৃথিবীকে আমাদের সৌরজগতের বাইরে থেকে দেখার প্রথম সুযোগ তৈরি হবে। এমনকি স্থানীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম সম্পর্কে আরও ভালভাবে বোঝার ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য,” বলেছেন স্পিটজার।
ধারণাটি বেশ কিছুদিন ধরেই চলমান। ২০২১ সালে, এই জাতীয় অনুসন্ধান চালাতে একটি মিশনের ধারণা তৈরি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, যা ‘ইন্টারস্টেলার প্রোব’ নামে পরিচিত।
তারা বলেছেন, এটি এলআইএসএম-এর উদ্দেশ্যে ৫০ বছরের দীর্ঘ যাত্রা শুরু করার পাশাপাশি “বাইরের জগৎ থেকে প্রথমবার আমাদের জীবন-ধারণকারী সিস্টেমটি দেখার সুযোগ দেবে।”
এ যাত্রা শুরু হতে পারে ২০৩৬ সাল থেকে। আর সর্বোচ্চ গতিতে বছরপ্রতি সাত এইউ বা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট ভ্রমণ করতে পারে এটি। পৃথিবীর হিসাবে যা বছরে প্রায় একশ কোটি কিলোমিটার।
আপনার মতামত জানানঃ