বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। মহামারী কেটে গেছে। জিনিসপত্রের দামও ধীরে ধীরে কমছে। তবে তা এখনো মহামারীর আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি। এরই প্রভাব পড়েছে বিশ্বের কয়েকটি বড় অথর্নীতির দেশে। চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে সংকুচিত হচ্ছে। আর জাপান ও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি টানা দ্বিতীয় প্রান্তিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। খবর এপি।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, কোনো দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি টানা দুই প্রান্তিকে নেতিবাচক হলে সাধারণত তা মন্দা হিসেবে বিবেচিত হয়। ঠিক এমনটাই ঘটেছে জাপান ও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে। সম্প্রতি উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশ দুটির অর্থনীতি ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে দুর্বল হয়েছে, যা টানা দ্বিতীয় প্রান্তিকে সংঘটিত সম্ভাব্য মন্দার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে ভোক্তা ব্যয় কমেছে। দেশটিতে ঋণপ্রতি দুই থেকে পাঁচ বছরে পুনঃতফসিল করতে হয়। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সুদহার বাড়ানোয় মর্টগেজের খরচ বেড়েছে। বিওইর সুদহার নির্ধারণ কমিটির সদস্য ক্যাথরিন মান সম্প্রতি জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির মন্দা সাময়িক। সাম্প্রতিক এক জরিপে এ ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে।”ফেডারেল রিজার্ভের মতো বিওই সুদহার কমানোর কথা ভাবছে।
অন্যদিকে জাপানে বার্ধক্য একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে দেশটির জনসংখ্যা সংকুচিত হয়েছে। বিদেশী শ্রমের জন্য দেশটি উন্মুক্ত নয়। ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পিছুটান হিসেবে কাজ করছে।
ইউরোপে ভোক্তাদের মনোভাব দুর্বল হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনে যুদ্ধের পর থেকে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে দ্রুত গতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা চীনও সম্প্রতি প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে। মন্থর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও প্রপার্টি খাতে দুর্বলতার কারণে সম্প্রতি দেশটির শেয়ারবাজার খারাপ পরিস্থিতিতে পড়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকারের ঋণ দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
তবে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশটি গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থনীতিবিদরা গত বছর পূর্বাভাস করেছিলেন, উচ্চ সুদের হারের কারণে দেশটিতে মন্দা অনিবার্য। এ পূর্বাভাস মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
মার্কিন অর্থনীতিতে সম্ভাব্য মন্দা এড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মহামারীকালীন প্রণোদনা। দেশটির সরকার ২০২০-২১ সালে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, মার্কিন অর্থনীতি যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এর পুরো কৃতিত্ব দিতে হবে পরিবারগুলোকে। তারা অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ব্যয় অব্যাহত রেখেছে। পরিবারগুলোর ব্যয় মার্কিন অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে দেখা দিয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বেশি হলেও কর্মচারীদের বেতন বাড়ায় প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা ক্রয় অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে অল্পসংখ্যক মার্কিন কর্মী বেকারত্বের সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন। এটি শক্তিশালী চাকরির বাজারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ক্রমাগত ছাঁটাইয়ে খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন কর্মীও নিয়োগ হচ্ছে, যা অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে সাহায্য করছে।
বিশ্বের বৃহৎ সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের আমেরিকার চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার সোলিটা মার্সেলি বলেন, ‘মার্কিন বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতির প্রতিফলন।’
তবে বিশ্লেষকরা মার্কিন অর্থনীতির ক্ষেত্রে মন্দার কবলে পড়ার ঝুঁকি এখনই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তাদের আশঙ্কা, মূল্যস্ফীতি আবার ত্বরান্বিত হতে পারে। এছাড়া সরকারের বিপুল ঋণ নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে, যা আর্থিক বাজারকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান মর্গ্যান স্ট্যানলির সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি উপার্জনকারী ছাড়া মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মোকাবেলা করা যুক্তরাষ্ট্রে কঠিন হয়ে উঠেছে।
আপনার মতামত জানানঃ