ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে অনলাইনে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়। বেশিরভাগ শিশুকেই প্রাপ্তবয়স্কদের স্পর্শকাতর অঙ্গের ছবি দেখিয়ে হয়রানি হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত মেটার অভ্যন্তরীণ নথি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুদের যৌন হয়রানির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো গত ৫ ডিসেম্বর মেটার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। মেটা কর্মীদের সাক্ষ্য ও তাদের মধ্যে বিভিন্ন চ্যাটের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সিলবিহীন আইনি নথিতে মেটা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ যুক্ত করা হয়েছে। নথিগুলো ২০২০ সালের একটি ঘটনা বর্ণনা করে। নথিতে বলা হয়, ইনস্টাগ্রামের মেসেজের (আইজি) মাধ্যমে অ্যাপলের একজন নির্বাহীর ১২ বছর বয়সী মেয়েকে যৌনসঙ্গমের জন্য প্রস্তাব করা হয়।
মেটার এক কর্মীকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলছে, এই ঘটনায় অ্যাপ স্টোর থেকে মেটাকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে অ্যাপল।
মেটার আরেক সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মী ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে নিজের মেয়ে কীভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল, তার বিবরণ গত বছরের শেষের দিকে মার্কিন কংগ্রেসে তুলে ধরেছেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে তিনি যেসব পরামর্শ দিয়েছিলেন, তার সবই উপেক্ষা করেছে মেটা।
গত বছর ৫ ডিসেম্বর নিউ মেক্সিকো রাজ্যের এক মামলার সূত্র সর্বশেষ এই নথি তৈরি করেছে মেটা। মেটা নিয়ন্ত্রিত সোশ্যাল মিডিয়াগুলো শিশু নিপীড়কদের বাজারে পরিণত হয়েছে বলে ওই মামলায় দাবি করা হয়।
নিউ মেক্সিকোর অ্যাটর্নি জেনারেল রাউল টরেজের অভিযোগ, শিশুদের খুঁজে বের করে বার্তা দিতে ও হয়রানি করতে প্রাপ্তবয়স্কদের সুযোগ করে দিচ্ছে মেটা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মেটা বলেছে, ‘খণ্ডিত উদ্ধৃতি ও পছন্দমতো নথি বেছে আমাদের কাজকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’
গত বুধবার প্রকাশিত নথির প্রতিক্রিয়ায় মেটা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কিশোর-কিশোরীদের অনলাইনে নিরাপদ ও বয়সোপযোগী অভিজ্ঞতা দিতে এবং তাদের পিতামাতাকে সহায়তা দিতে ৩০টিরও বেশি টুল ব্যবহার করা হয়।
‘আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে গত এক দশক ধরে কাজ করছি এবং এমন লোকদের নিয়োগ করেছি, যারা শিশুদের নিরাপদ রাখতে ও অনলাইনে সহায়তা দিতে তাদের ক্যারিয়ার উৎসর্গ করেছেন। প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও শিশুবান্ধব করতে কাজ করছে কোম্পানি। কিশোরদের অবাঞ্ছিত যোগাযোগের সম্মুখীন হওয়া থেকে, বিশেষ করে, প্রাপ্তবয়স্কদের হয়রানি থেকে বাঁচাতে কোম্পানি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে।’
গত এপ্রিলে গার্ডিয়ানের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মামলায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। সেখানে বলা হয়, শিশু পাচারে প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে মেটা। শিশুদের কেনাবেচার জন্য পাচারকারীরা কীভাবে ফেসবুক মেসেঞ্জার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, তা তদন্তে উঠেছে।
২০১৭ সালের কোম্পানির এক অভ্যন্তরীণ ইমেইলে দেখা যায়, ফেসবুক মেসেঞ্জারের ‘ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু’ স্ক্যান করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন নির্বাহীরা। তারা বলেন, অন্যান্য অ্যাপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এই সিদ্ধান্ত তাদের অসুবিধায় ফেলবে।
গত ডিসেম্বরে ফেসবুকে ও মেসেঞ্জারের অ্যান্ড-টু-এল এনক্রিপশন চালু করার জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল মেটা। কারণ এর ফলে মেসেজের সেন্ডার বা রিসিভার ছাড়া কেউ মেসেজের বিষয়বস্তু দেখতে পারে না। এটি যৌন শিকারিদের ও পাচারকারীদের বিচারের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় বলে শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা, নীতিনির্ধারক এবং আইন প্রয়োগকারীরা দাবি করেন।
আপনার মতামত জানানঃ