বাংলাদেশে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের বিজয় কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। শেখ হাসিনা একে ‘জনগণের বিজয়’ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে, এই বর্ণনা যথার্থ (অ্যাকুরেট) নয়।
নির্বাচনে শতকরা মাত্র ৪০ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাচন তদারকির জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করেছিল। কিন্তু সেই দাবি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তারা নির্বাচন বর্জন করে।
এর ফলে শেখ হাসিনার টানা চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশকে আঁকড়ে ধরবে রাজনৈতিক ক্ষোভ। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চলবে একটি ‘জিরো-সাম’ গেম। আগের বহু বছরের মতো রাজপথে এই ক্ষোভ দেখা দেবে। বিরোধী দল হরতাল আহ্বান করবে।
সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর দমনপীড়ন চালাবে। এমন প্রতিটি ঘটনায় সহিংসতা ও রক্তপাত একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এক সময় শেখ হাসিনাকে সারাবিশ্ব প্রগতিশীল নেত্রী হিসেবে সমাদর করতো। কিন্তু তিনি সমালোচক ও মিডিয়াকে স্তব্ধ করে ক্ষমতার শক্ত দখল রাখতে নেমে পড়েছেন কর্তৃত্ববাদে।
শেখ হাসিনা তার পিতা বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। এমন একজন নেত্রীর এই দমনমূলক প্রবণতা দুর্ভাগ্যজনক। শেখ হাসিনা ও তার দল বিশ্বাস করে বাংলাদেশকে সঠিক লেন্স দিয়ে দেখছে না বিশ্ব। তাদের বলার মধ্যে আছে যে, তিনি একটি ছোট দেশের নেত্রী।
এ দেশটি কমপক্ষে ৫ দশক আগে সহিংস পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অস্তিত্ব লাভ করে। তিনি বিরোধী দলের সঙ্গে যে আচরণ করছেন তা ‘অগণতান্ত্রিক’। এসব কিছু সত্ত্বেও তিনি ইসলামপন্থি উগ্রবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়ই দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তন পরিচালনা করেছেন।
ঠিক এই কারণে এমন একটি যুগ দেখা যাচ্ছে, যা গণতন্ত্র থেকে পিছনে পিছিয়ে যাচ্ছে। তারা আশা করছিলেন তিনি এই অঞ্চলে এবং বিশ্বে একটি ভাল উদাহরণ সৃষ্টি করবেন।
অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পক্ষান্তরে একজন বন্ধু পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় তাকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক জয়ে প্রথমেই বিশ্বের যেসব নেতা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
গত দুই দশক ধরে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন সমর্থক দিল্লি। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে পাঠানো ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের বিষয়ে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়ে শেখ হাসিনাকে প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে দেখে দিল্লি। তার পূর্বসূরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দিল্লির কাছে ছিলেন আতঙ্ক, যা দিল্লি ভুলে যায়নি।
খালেদা জিয়ার শাসনে ছিল জোট সরকার, তাতে ঠাসা ছিলেন ইসলামপন্থি রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর নেতারা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু এবং তাদের উপাসনালয়কে সুরক্ষিত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তদুপরি ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে দিল্লির রেডলাইন ভালভাবে অনুধাবন করছেন শেখ হাসিনা।
প্যারাডক্স হলো- শেখ হাসিনার প্রতি দিল্লির খোলামেলা আনুগত্য তাকে তার দেশের ভিতর আরও বেশি অজনপ্রিয় করে তুলেছে। তার এই ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক পুজি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে পারে না ভারতের এস্টাবলিশমেন্ট। ভারত ও এ অঞ্চলের সর্বোত্তম স্বার্থের জন্য একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ থাকা উচিত।
আপনার মতামত জানানঃ