স্বল্প ভোটার উপস্থিতি এবং বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা-সহ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচনের শেষ দিকে এসে জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অনেক প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, তবে অনিয়মের অভিযোগে নয়টি আসনের ২১ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
বিরোধী দল বিএনপি দাবি করেছে যে ভোটাররা তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোট বর্জন করেছে। অন্যদিক আওয়ামী লীগ বলেছে ভোট বর্জনের আহবান যারা দিয়েছে তাদেরই ভোটাররা বর্জন করেছেন। এছাড়া ভোটারদের উপস্থিতিও সন্তোষজনক ছিল বলে আখ্যায়িত করেছে দলটি।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবীবুল আউয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে এবং তার মতে সহিংসতার যে শঙ্কা ছিলো ”শেষ পর্যন্ত তেমনটি হয়নি”।
“নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটাররা স্বত:স্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে এসে স্বাধীনভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে কমিশন চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি,” বলছিলেন তিনি।
যদিও সকালে নিজের ভোট দিয়ে নির্বাচন ভবনে ফিরে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন যে তিনি ভোটকেন্দ্রে নৌকার পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্য কারও এজেন্ট দেখতে পাননি।
প্রসঙ্গত, দেশ জুড়ে তিনশ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে আজ (রবিবার) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করে এ নির্বাচন বর্জন করে দেশবাসীকে ভোটে অংশ না নেয়ার আহবান জানিয়েছিল।
অন্যদিকে পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররাই এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং আজকের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
স্বল্প ভোটের নির্বাচন
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়ার তথ্য দিলেও এর আগে কমিশন বেলা তিনটা পর্যন্ত সারা দেশে ২৭.১৫% ভোট পড়ার তথ্য দিয়েছিলো। বিভিন্ন স্থান থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই ভোট পড়ার হার ছিল খুবই কম। কোনও কোনও কেন্দ্র ভোটার শূন্যও ছিলো দীর্ঘ সময় ধরে।
এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে ভোটারদের আসতে দেখা গেছে। আবার বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের এজেন্ট ছাড়া অন্য প্রার্থীদের এজেন্ট দেখা যায়নি।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে কোথাও কোথায় ভোটার কিছুটা দেখা গেলেও রাজধানীর ঢাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার দেখা গেছে খুবই কম।
সংঘাত ও সহিংসতা
মুন্সীগঞ্জে একজনের মৃত্যু, চট্টগ্রামে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, চট্টগ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুইজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনে অনিয়ম, সংঘাত ও জোর করে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে।
জোর করে সিল মারার অভিযোগে একজন মন্ত্রীর ছেলেকে আটকের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই অভিযোগে একটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে দিনের শুরুতেই।
এছাড়া জাল ভোট দেয়ার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন আসন থেকে মোট ১০ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান জেলার স্থানীয় সাংবাদিক মাসুক হৃদয়।
কক্সবাজার-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান এমপি ও নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেছেন, “আজ দুপুর ১২টার পর থেকে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজিবি, তারা সকলে কেন্দ্র দখল করে আমার এজেন্টদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে।”
“এটা প্রতিহত করতে গিয়ে প্রাণহানির চেয়ে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম,” ভিডিও বার্তায় বলেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক অভিযোগ করেছেন যে অন্তত বিশটি কেন্দ্রে তার এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি বা বের করে দেয়া হয়েছে।
মি. হক একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য ও হুইপ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
ওদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ”আমরা যেটা আশঙ্কা করছি সেটা হলো, আমাদেরকে ভোটে নিয়ে এসে শেষ পর্যন্ত কোরবানি দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয় কি না। এটা নিয়ে আমরা একটু শঙ্কিত।”
নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে হরতাল পালন করছে বিএনপি। চট্টগ্রামে হরতালের সমর্থনে মিছিলে পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।
ফরিদপুর-৩ আসনের অনেক কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদ। একটি কেন্দ্রে তাকে ঘেরাও করা হয়েছে বলে অভিযোগও করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যাচ্ছে, সারা দেশে ভোটে ৩৭টি স্থানে অনিয়ম ও গোলযোগের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। জাল ভোটের অভিযোগে আটক করা হয়েছে ছয় জনকে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বরগুনায় একজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চট্টগ্রামের একজন মহিলা চেয়ারম্যান আটক করা হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ