গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য কেবল মিসরের সাথে সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং খোলা রয়েছে। এ সীমান্ত দিয়ে যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করছে, তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগন্য।
অব্যাহত যুদ্ধের কারণে গাজার অর্ধেক মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কার্ল স্কাউ। যুদ্ধবিদ্ধস্ত উপত্যকাটি পরিদর্শনের পর তিনি এ কথা জানান। খবর বিবিসির।
কার্ল স্কাউ জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) উপ-পরিচালক। তিনি বলেন, যে পরিমাণ সহায়তা প্রয়োজন তার মাত্র এক ভাগ পাচ্ছে গাজাবাসী। উপত্যকাটিতে প্রতিদিন প্রতি ১০ জনের ৯ জনই খেতে পায় না। গাজার পরিস্থিতি সেখানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো ‘প্রায় অসম্ভব’ করে তুলেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নির্মূল করতে এবং জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনতে তারা গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে।
হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেক্ট গতকাল শনিবার বিবিসিকে বলেন, “কোনো বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু এবং দুর্ভোগ আমাদের কাছে বেদনার। কিন্তু আমাদের সামনে এ ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।’
হামলা অব্যাহত রাখতে ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলের কাছে ১০৬ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের প্রায় ১৪ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকষ্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। হামাসের হাতে জিম্মি হয় ২৪০ জন। জবাবে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এর মধ্যে সাত হাজারেরও বেশি শিশু। অব্যাহত হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। বাস্তুচ্যূত হয়ে কয়েক লাখ মানুষ।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ভেতরে ও বাইরে স্বাভাবিক চলাফেরাও ব্যাপকভাবে সীমিত করা হয়। এ কারণে উপত্যকাটিতে ত্রাণ সহায়তা সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য কেবল মিসরের সাথে সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। এ সীমান্ত দিয়ে যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করছে, তা চাহিদার তুলনায় নগন্য বললেই চলে।
এ সপ্তাহে ইসরায়েল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে থেকে ইসরায়েল থেকে গাজায় প্রবেশের জন্য কেরেম শালোম ক্রসিং খুলে দিতে সম্মত হয়েছে। তবে এই ক্রসিং দিয়ে কোনো ত্রাণ সহায়তার ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। কেবল ত্রাণের ট্রাকগুলো পরিদর্শনের জন্য এই ক্রসিং ব্যবহার করা হবে। পরিদর্শন শেষে ট্রাকগুলোকে রাফাহ ক্রসিং হয়েই গাজায় প্রবেশ করতে হবে।
স্কাউ জানান, এ সপ্তাহে গাজা সফরের সময় তিনি ও তার ডব্লিউএফপি দল যে ‘ভয়, বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা’ প্রত্যক্ষ করেছেন, তার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না।
গাজার পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি জানান, গাজায় তারা খাদ্য গুদামগুলোর সামনে বিশৃঙ্খলা, সাহায্য বিতরণের জায়গাগুলোতে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর ভিড়, পণ্যহীন সুপারমার্কেট, অস্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বাস্তুচ্যূত মানুষের গাদাগাদি দেখেছেন।
আন্তর্জাতিক চাপ ও গত মাসে সাতদিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির ফলে উপত্যকাটিতে কিছু প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ডব্লিউএফপি জোর দিয়ে বলছে, চাহিদা মেটাতে এখন দ্বিতীয় সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়া প্রয়োজন।
স্কাউ বলেন, গাজার কিছু এলাকায় প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে ৯টিই খাবার ছাড়া প্রতিটা দিন কাটাচ্ছে। গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস শহরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। শহরটির দুই প্রান্ত ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক।
শহরটির একমাত্র অবশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আহমেদ মোগরাবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিবিসিকে বলেন, ‘আমার তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। সে সবসময় আমার কাছে কিছু মিষ্টি, কিছু আপেল, কিছু ফল চায়। আমি দিতে পারি না। আমি অসহায় বোধ করি।’
তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত খাবার নেই, পর্যাপ্ত খাবার নেই, শুধ ভাত, আপনি বিশ্বাস করতে পারেন শুধুই ভাত? আমরা দিনে একবার, মাত্র একবার খেতে পারি।’
সম্প্রতি খান ইউনিসে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এটি বলছে, হামাসের নেতারা খান ইউনিসে লুকিয়ে আছে। অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৩টি সদস্য রাষ্ট্রসহ পক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমর্থন দেয়। কেবল যুক্তরাষ্ট্র এতে ভেটো দেয়।
ইসরায়েল বলছে, তাদের উদ্দেশ্য হামাসকে নির্মূল করা। এখন যুদ্ধবিরতি হলে হামাসই সবচেয়ে লাভবান হবে।
আপনার মতামত জানানঃ