রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল। এ অবস্থায় চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশটিকে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিতে সম্মত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এতে দেশটির অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। ঋণ অনুমোদনের খবরে পাকিস্তানের পুঁজিবাজারের সূচক একদিনেই ২ হাজার ৪০০ পয়েন্টের বেশি বাড়ে।
অন্যদিকে দেশটির তুলনায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইএমএফের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশও। সংস্থাটির পর্ষদ এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ঋণ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে। যদিও ঋণ অনুমোদনের পরদিন দেশের পুঁজিবাজারের সূচক পয়েন্ট হারায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়ায় অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারে এর প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে না।
তিন বছর ধরে অর্থনৈতিকভাবে বেশ কঠিন সময় পার করছে পাকিস্তান। অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে একপর্যায়ে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকে। অতিপ্রয়োজনীয় জ্বালানি কেনারও অর্থ ছিল না দেশটির কাছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে শেষ পর্যন্ত আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ভালো করছে পাকিস্তানের পুঁজিবাজার। ব্লুমবার্গের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, দেশটির পুঁজিবাজার সম্প্রতি বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা বাজারের স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্যদিকে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে বেশ এগিয়ে থাকলেও মন্থর গতি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে।
ব্লুমবার্গ বিশ্বের ৯০টি দেশের পুঁজিবাজারের সূচক নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে পাকিস্তানের কেএসই-১০০ সূচক বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা পুঁজিবাজার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে সূচকটি ৫০ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। ছয় বছর পর সূচকটি এ অবস্থানে এসেছে।
২০১৮ সালের ২ নভেম্বর দেশটির কেএসই সূচক ৪২ হাজার ৪ পয়েন্টে ছিল। সর্বশেষ গত শুক্রবার সূচকটি ৫০ হাজার ৯৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে সূচকটি বেড়েছে ২১ শতাংশ। আইএমএফ পাকিস্তানকে ঋণ দিতে সম্মত হওয়ার পর গত ৩ জুলাই দেশটির কেএসই-১০০ সূচক একদিনে ২ হাজার ৪৪২ পয়েন্ট বেড়ে ৪৩ হাজার ৮৯৫ পয়েন্টে উঠে যায়, যা ছিল ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগের পরিমাণ ২০২১ সালের জুনে দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল। একই বছরের ডিসেম্বরে এটি সর্বনিম্ন ঋণাত্মক ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশটির বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ১ কোটি ২৩ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিও বেশ নাজুক। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০ অক্টোবর শেষে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
পাকিস্তানি রুপি সাম্প্রতিক সময়ে অবস্থান কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। গত জুলাইয়ে আইএমএফের সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রাথমিক ঋণ চুক্তির পর দেশটির পুঁজিবাজারের সূচক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। এ ঋণের মাধ্যমে পাকিস্তান দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা পায়। গত সেপ্টেম্বরে রেকর্ড পরিমাণ পতনের পর রুপির মান চলতি মাসে ১০ শতাংশ পুনরুদ্ধার হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্লুমবার্গের বেস্ট পারফর্মিং মুদ্রার স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও দেশটির অর্থনীতি এখনো বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং আইএমএফের চাহিদা অনুসারে জ্বালানির মূল্য বাড়ানোর কারণে চলতি বছরে এটি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তানের পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিষয়টি পাকিস্তানের পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তবে আগামী জানুয়ারিতে দেশটির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া আইএমএফের সঙ্গে চূড়ান্ত ঋণ চুক্তির বিষয়টিও ২০২৪ সালে দেশটির পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বমুখিতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আশাব্যঞ্জক পারফরম্যান্স করতে পারছে না। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ১ হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে ছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এটি ২ হাজার ১৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এ সময়ে সূচকটি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। অবশ্য গত এক বছরে ডিএস-৩০ সূচক ৫ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে। ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স এ সময়ে দেড় শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে। সূচকের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও কমছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজারে দৈনিক গড়ে ১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারের শেয়ার লেনদেন হয়। সেখানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দৈনিক গড় লেনদেন নেমে এসেছে ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
এ বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ ঋণ অনুমোদনের পরদিন দেশের পুঁজিবাজারের সব সূচকই কমেছিল।
গত ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আগামী ১১ ডিসেম্বর আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদন পেলে আরো ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাওয়া যাবে। সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে মতৈক্য হয়েছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘কভিডের পর সব দেশের পুঁজিবাজারই ভালো করেছে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা সে ধরনের পারফরম্যান্স করতে পারিনি। আমাদের ধ্যান-ধারণা ও নীতিগুলো বাজার পরিস্থিতির উন্নয়নকে উৎসাহিত করে না। অন্যদিকে ডলার সংকটের প্রভাবকে অবহেলা করারও সুযোগ নেই। এর সঙ্গে আসন্ন নির্বাচন পরিস্থিতির দিকেও বিনিয়োগকারীদের নজর রয়েছে। এসব কিছুরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে।’
বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকই চাপের মধ্যে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির বাড়বাড়ন্তের প্রভাবে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগের মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে খাদ্যমূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা এখনো ১২ শতাংশের নিচে নামেনি।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমেই কমছে। আইএমএফের বিপিএম সিক্স পদ্ধতি অনুসারে, সর্বশেষ ২৫ অক্টোবর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য দেশের নিট রিজার্ভ আরো কম, ১৭ বিলিয়ন ডলারের মতো। গত সেপ্টেম্বরেই রিজার্ভ কমেছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। গত দুই বছরে প্রতি মাসে গড়ে ১ বিলিয়ন ডলার করে রিজার্ভ কমেছে। এতে সরকারের আমদানি সক্ষমতাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
গত বছরের জানুয়ারিতে দেশে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। আর সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার প্রতি ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়। এ সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
রিজার্ভ পরিস্থিতি দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি করেছে। তাছাড়া ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে অনেকেই সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের পরিমাণ কমে আসছে।
তাছাড়া বর্তমানে অনেক কোম্পানির শেয়ারদরই ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে। এ কারণে এসব শেয়ার বিক্রি করে সে অর্থ দিয়ে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। সব মিলিয়ে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। তবে পাকিস্তানের তুলনায় আর্থিক সূচকে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকলেও দেশের পুঁজিবাজারের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পেছনে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের সংকটকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজারের আইনি কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো আরো বেশি বিনিয়োগকারীবান্ধব হওয়া প্রয়োজন। এটি করা সম্ভব হলে বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। আর আস্থা বাড়লে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে প্রতিফলিত হবে।’
পুঁজিবাজারে বর্তমানে অনেক ভালো ও মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিও মতো বিষয়গুলো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ব্যবসা ও মুনাফাকে প্রভাবিত করছে। এরই মধ্যে বেশকিছু কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক ফলাফলে বিষয়টি প্রতিফলিত হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবসা ও মুনাফা পরিস্থিতি নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।
কারণ কোম্পানির মুনাফা কমলে সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের পরিমাণও কমবে। অবশ্য ভালো ও মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার দরে তেমন প্রভাব না পড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু স্বল্প মূলধনি ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এমন কোম্পানির শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উল্লম্ফন দেখা গেছে। এতে একশ্রেণীর কারসাজি চক্রের হাত রয়েছে। বেশি রিটার্নের আশায় এসব শেয়ারের প্রতি ঝুঁকেছেনও অনেকে। ভালো কোম্পানির তুলনায় মন্দ কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক উল্লম্ফনের বিষয়টি দেশের পুঁজিবাজারের অপরিপক্বতার পরিচায়ক বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির বেশকিছু ক্ষেত্রে সমন্বয় করার প্রয়োজন ছিল, যা এখনো পুরোপুরি করা হয়নি। তাছাড়া ফ্লোর প্রাইসের কারণেও পুঁজিবাজারে সূচকের সমন্বয় সেভাবে হয়নি। ফলে পুঁজিবাজার অনেকটা স্থবির হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান তার অর্থনৈতিক কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ফেলেছে। সেখানে বিনিময় হার সমন্বয় করা হয়েছে, যার ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ছে।
তাছাড়া পাকিস্তানের পুঁজিবাজারের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বর্তমানে অত্যন্ত আকর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা আকর্ষণীয় রিটার্নের আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করছেন, যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে।’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগ পরিস্থিতি বর্তমানে ঋণাত্মক। এর মানে হচ্ছে বিদেশীরা শেয়ার কেনার তুলনায় বিক্রি করছেন বেশি। বিশেষ করে ২০১৮ সাল থেকেই এ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সে বছর দেশের পুঁজিবাজারের বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কেনার তুলনায় ৫৯৩ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন। একইভাবে ২০১৯ সালে ৪৮৮ কোটি, ২০২০ সালে ২ হাজার ৬০৬ কোটি, ২০২১ সালে ২ হাজার ৫৩৬ কোটি ও ২০২২ সালে ১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কেনার তুলনায় ১১০ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন। দেশের পুঁজিবাজার থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত শেয়ার বিক্রির বিষয়টি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করেছে। কারণ তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিসহ স্থানীয় ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোতেই বিদেশীরা বিনিয়োগ করেন। তাদের কাছে থাকা এসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার কারণে বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ২০২১ সাল থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোড শো ও বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যদিও এর প্রভাব পুঁজিবাজারে বিদেশীদের পোর্টফোলিও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো দৃশ্যমান নয়।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কিছুটা কমেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারণে উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। নির্বাচনের পরে সুদহার ও বিনিময় হারের ক্ষেত্রে উন্নতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আর দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হলে পুঁজিবাজারেও এর প্রভাব পড়বে।
পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিময় হার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। ফলে বিনিময় হার স্থিতিশীল হলে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগও বাড়বে। তাছাড়া বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব রোড শোর আয়োজন করা হচ্ছে সেগুলোর কারণেও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
আপনার মতামত জানানঃ