ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে পি কে হালদার প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনি কানাডায় পলাতক আছেন। পি কে হালদারের অর্থপাচার ও দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি চলাকালে হাইকোর্ট পিকে হালদারের মা’সহ আরো ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ সময় আদালত অর্থপাচার রোধে বা পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একইসাথে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থপাচারের দায় এড়াতে পারে না বলেও জানিয়ে দেন।
হাইকোর্ট বলেন, ‘বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে। এতো কিছু হচ্ছে তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) কিছু করছে না কেন? তারা শুধু ওখানে (অফিসে) এসে বসে থাকবেন, কিছু করবেন না তা তো হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থপাচারের দায় এড়াতে পারে না।’
এ সময় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির বিষয়ে শুনানি চলছিল হাইকোর্টে।
আজ মঙ্গলবার(০৫ জানু) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানি চলছে।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সঙ্গে আছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেজাবীন রাব্বানি দিপা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। এছাড়া রয়েছেন আইনজীবী মো. মোশাররফ হোসেন।
এসময় অভিযুক্ত পলাতক পি কে হালদারের সাথে সম্পর্কযুক্ত ২৫ জন ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। এদের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর মা, অন্যান্য আত্মীয়স্বজন এবং তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মীও রয়েছেন।
পি কে হালদারের দখল করা বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের পাঁচজন আমানতকারীর করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পাঁচ আমানতকারীকে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত করা হয়েছে।
পাঁচ আমানতকারী হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে ড. নাশিদ কামাল, গৃহিণী সামিয়া বিনতে মাহবুব, মো. তরিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক মো. শওকতুর রহমান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত রাজিউল হাসান।
প্রশান্ত কুমার হালদার, যিনি পি কে হালদার নামেও পরিচিত, তিনি গত বছর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথেও যুক্ত ছিলেন, মালিক ছিলেন আরো নানা বেসরকারি উদ্যোগের। ব্যাংক বহির্ভূত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে ইন্টারপোল যাতে একটি রেড অ্যালার্ট জারি করে, সেজন্যও সংস্থাটির সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কেবল পি কে হালদার নয়, বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে এমন আরো অসংখ্য কর্তাব্যক্তি রয়েছেন যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নাকের ডগা থেকে বিদেশে অর্থপাচার করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির কার্যত কোনো ভূমিকা লক্ষণীয় নয়। অনেকে আবার অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজেশে বিদেশে প্রতিবছর মোটা অংকের টাকা পাচার হয়ে থাকে। এবিষয়ে সরকার থেকে শুরু করে প্রশাসন এবং এসবের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো পদক্ষেপ নজরে আনার মতো নয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিদেশে যে পরিমাণ টাকা পাচার হয় তা দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর দেশ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে। একইসাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিলে অর্থের ঘাটতি মেটাতেও অন্যান্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হওয়া থেকে ব্যাংকটি ঋণমুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু বিদেশে অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষণীয় কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না বলে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২০
আপনার মতামত জানানঃ