বিরোধী দলের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বাংলাদেশে একজন নিহত ও কয়েক শত মানুষ আহত হওয়ার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার ইয়াসাসমিন কাভিরাত্নে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে এবং সহজতর করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি শক্তি প্রয়োগের আগে পুলিশকে অহিংস উপায় অবলম্বন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইয়াসাসমিন কাভিরাত্নে বলেন, জনগণকে অবাধে প্রতিবাদ করতে দেয়া উচিত।
তাদের কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার মাধ্যমে সরকার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দেশের ভিতরে ভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সহ্য করা হবে না। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সংযম চর্চা নিশ্চিত করাতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাচ্ছি। দ্রুততার সঙ্গে এবং পক্ষপাতিত্বহীনভাবে নিহত কর্মীর মৃত্যু তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।
ইয়াসাসমিন কাভিরাত্নে বলেন, নিশ্চিত করতে হবে যে এই হত্যার সঙ্গে জড়িতদেরকে জবাবদিহিতায় আনা হয়েছে এবং তাদের বিচার হচ্ছে।
একই বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বিপুল।
দেশজুড়ে এমন প্রতিবাদ বিক্ষোভে সংঘর্ষে বিরোধী দলের কমপক্ষে একজন কর্মী নিহত ও কয়েক শত আহত হয়েছেন। বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেট খবর প্রকাশ করেছে যে, পুলিশ এসব বিক্ষোভে বৈষম্যহীনভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে।
গ্রেপ্তার করেছে বিরোধী দলীয় নেতাদের। বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলা এবং বাংলাদেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভকে দমিয়ে রাখার চেষ্টার বিষয়ে সম্প্রতি প্রামাণ্য তথ্য হাজির করেছে অ্যামনেস্টি।
সহিংসতার কোনো স্থান নেই
কা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে- গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন। ব্রিফিংয়ে উঠে আসে বুধবার নিউ ইয়র্কে নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে কিছু বিক্ষোভকারীর বচসার কথাও। এরপর তাদের একজনের বাড়িতে হামলা হয়।
এ বিষয়েও মন্তব্য করেছেন ম্যাথিউ মিলার। হিরো আলম প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ ও পক্ষপাতিত্বহীন তদন্তে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করি।
আমরা আগেও বলেছি এবং এখনও বলছি, আশা করবো বাংলাদেশ সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। আমরা পরিস্থিতির দিকে অব্যাহতভাবে নজর রাখছি। শামীম ওসমান এমপি প্রসঙ্গে ম্যাথিউ মিলার বলেন, গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
ব্রিফিংয়ে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন- সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর শেষে ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। এরই মধ্যে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর হামলা ফিরে এসেছে।
সবেমাত্র সোমবার একটি উপনির্বাচন হয়েছে। তা বর্জন করেছে প্রধান বিরোধী দল। এমনকি সেখানে স্বতন্ত্র একজন প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
এই নির্বাচনে শতকরা ১০ ভাগেরও কম ভোট পড়েছে। সুতরাং কিভাবে আপনি বিশ্বাস করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, যেহেতু ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না।
আর এখন উপনির্বাচনও অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। প্রার্থী তো হামলার শিকার হয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে আপনাদের অবস্থান কি? আপনারা কি এ বিষয়টি ফলো করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার ওপরের ওইসব মন্তব্য করেন।
তার কাছে আবার প্রশ্ন করা হয়, বুধবার রাতে নিউ ইয়র্কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন এমপির সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিরোধী দলীয় কিছু কর্মী। কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশে তাদের একজনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল ওই হামলা ফেসবুকে লাইভ দিয়েছে। তাতে তারা দেখিয়েছে, দেশের বাইরে থেকে যারা কথা বলছে, তাদের ওপর তারা হামলা চালাচ্ছে। এটা লাইভ দেখানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেউ যদি কথা বলেন অথবা প্রতিবাদ করেন অথবা সরকার দলের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক দেখান- তাহলে দেশে তাদের বাড়ি নিরাপদ নয়। এর প্রেক্ষিতে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি? সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার একটিই বাক্য ব্যবহার করেন।
বলেন, আবারও আমি শুধু বলবো, আপনি যে ধরনের সহিংসতার কথা উল্লেখ করেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে তার কোনো স্থান নেই।
এসডব্লিউএসএস/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ