জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তেল বা কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সস্তা সৌরবিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে ইউরোপ; মহাদেশজুড়েই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছড়াছড়ি। এ জন্য প্রায়ই বিদ্যুতের উৎপাদন চাহিদাকে ছাপিয়ে যায়। আর তখন দাম কমতে কমতে শূন্যের নিচে নেমে যায়।
এ ঘটনা গতকাল মঙ্গলবারও আবার ঘটেছে বলে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গতকাল বিকেলের শুরুতে এসব সৌরকেন্দ্রের উৎপাদন সঞ্চালন সক্ষমতাকে ছাপিয়ে যায়। ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিদ্যুতের বাজার জার্মানিতে স্থানীয় সময় বেলা ১টা থেকে ৩টার মধ্যে বিদ্যুতের দাম শূন্যের নিচে চলে যায়।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন খাতে ইউরোপ ভর্তুকি দেয়। এজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে, এক বা দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে গেলে যে খরচ হবে, তার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য ভোক্তাদের টাকা দেওয়া সাশ্রয়ী।
এদিকে নেদারল্যান্ডসে ছাদে বসানোর সোলার প্যানেল একপ্রকার বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে ইউরোপে বিদ্যুতের দাম শূন্যের নিচে নেমেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির পরেই বিদ্যুতের সর্বনিম্ন এই দরপতন হলো। যদিও শনিবার ও রোববার বিদ্যুতের দাম শূন্যের নিচে থাকার সম্ভাবনা বেশি, কারণ চাহিদা কম থাকে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে এমন দরপতন অনেকটাই অবিশ্বাস্য। এদিকে জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসেও আজ বিদ্যুতের দাম শূন্যর কোটায় নামতে পারে।
এমনকি চাহিদার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হলে বিদ্যুতের দাম শূন্যর কোটায় থাকাটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
এইচএসবিসি হোল্ডিংসের গবেষণা অনুসারে, ইউরোপ ২০২৩ সালে ৬০ গিগাওয়াট নতুন সোলার প্যানেল স্থাপন করতে প্রস্তুত, যা গত বছরের রেকর্ড থেকে এক-তৃতীয়াংশ বেশি।
এতে ভোক্তারা দিনের বেলায়ই গাড়ি চার্জ করতে পারবেন। এই সবুজ শক্তি দিয়ে ব্যবসা চালানোর খরচও হবে কম।
বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ
গত বছরের গ্লোবাল এনার্জি মনিটর (জিইএম)-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতায় সম্ভাবনাময় ২০টি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ।
তবে বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা ২০টি দেশের তালিকার কাছাকাছি স্থানেও নেই বাংলাদেশ।
জিইএম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোভিত্তিক একটি জীবাশ্ম জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা। গত ২৪ মে এ তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি সক্ষমতা নিয়ে এ জরিপ শুরু করে।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তর পর্যবেক্ষণের জন্য জিএমই নতুন দুইটি টুল উন্মুক্ত করেছে। এগুলোর একটি হচ্ছে বায়ুশক্তি সক্ষমতা ট্র্যাকার, অন্যটি সৌরশক্তির।
সরকারি, কর্পোরেট, ও অন্যান্য পাবলিক উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ দুইটি ট্র্যাকার প্রকল্প-পর্যায়ের উপাত্ত প্রদর্শন করে। এ উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, একটি দেশ কী পরিসর ও দ্রুতিতে সৌর ও বায়ু শক্তি সক্ষমতা অর্জন করছে।
ওই ট্র্যাকারের উপাত্ত থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ ২৬৬৫টি সম্ভাবনাময় সৌরবিদ্যুৎ ফার্ম ও ৩৫৫টি বায়ুবিদ্যুৎ ফার্মের সক্ষমতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের ৩৪টি সৌরবিদ্যুৎ ফেইজ কাউন্ট ও কেবল সাতটি বায়ুবিদ্যুৎ ফেইজ কাউন্ট রয়েছে।
সৌরবিদ্যুৎ-এ ফেইজ বলতে সাধারণত এক পারমিটের অধীনে স্থাপন করা এক বা একাধিক সোলার ইউনিট, ও একটি শক্তি ক্রয় চুক্তির সমন্বিত ব্যবস্থাকে বোঝায়।
তবে জিইএম-এর ওই প্রতিবেকদনে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ থেকে প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
বর্তমানে বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা যথাক্রমে ৫৫৪.১৭ মেগাওয়াট ও ২.৯ মেগাওয়াট। ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের বাইরে বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ২২ গিগাওয়াট।
বিশ্বে বর্তমানে চীন বায়ুবিদ্যুৎ ব্যবহার করে ২৬১.২ গিগাওয়াট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১২৭.৩ গিগাওয়াট, জার্মানি ৩৯.৬ গিগাওয়াট, স্পেন ২৬.৮ গিগাওয়াট, ও ভারত ২৩.৭ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
অন্যদিকে সৌরশক্তি ব্যবহার করে চীন ১৩০.৩ গিগাওয়াট, যুক্তরাষ্ট্র ৪৩.৩ গিগাওয়াট, ভারত ২৯ গিগাওয়াট, ভিয়েতনাম ১১.৩ গিগাওয়াট, ও মেক্সিকো ১০.৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ