কিছুদিন আগে পর্নতারকার মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও খানিক পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাকে, তবে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মামলা আপাতত চলবে। কিন্ত গণমাধ্যমগুলো ট্রাম্প কেলেঙ্কারি ঘটে যাওয়ার পর অনেকে পুরোনো স্মৃতি ঘেঁটে বের করে আনছে ফেলে আসা সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঘিরে থাকা বিতর্ক।
প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন থেকেই এমন বিতর্ক শোনা যায় কান পাতলেই। ভার্জিনিয়ায় ভেনাস নামের এক দাসীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল তার, গুঞ্জন তেমনই। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমসে’ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ভেনাসের এক উত্তরসূরি ডিএনএ টেস্টেরও দাবি তুলেছিলেন। এই দাবি ঠিক না ভুল, সেই প্রসঙ্গে না গিয়েও বলা যায় একেবারে শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঘিরে এই ধরনের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তালিকা রীতিমতো দীর্ঘ।
সবার কথা এই লেখায় বলার সুযোগ নেই। তবে জন এফ কেনেডিকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলানের দাবি ছিল, ওভাল অফিসের সবচেয়ে বড় কেচ্ছা-পুরুষ জন এফ. কেনেডিই।ট
অখ্যাতদের কথা ছেড়েই দিলাম। অন্তত ১১ জন বিখ্যাত নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরির কথা জানা যায়। তবে কেনেডি কোনোদিনই তার নারী লিপ্সার কথা গোপন করেননি। প্রকাশ্যেই তাকে বলতে শোনা গেছে, দিন তিনেক নারীসঙ্গ না থাকলে নাকি তার মাথা ধরে যায়! স্ত্রীকে খুব একটা পোষাত না প্রেসিডেন্টের। বরং বৈঠকের মাঝেই কেবিনে ঢুকে পড়তেন কোনো না কোনো মেয়েদের নিয়ে। এমন লোলুপ পুরুষের সঙ্গে যদি মেরিলিন মনরোর মতো ভুবনমোহিনীর আলাপ হয়, তাহলে কী হতে পারে সহজেই অনুমেয়।
মনরোর সঙ্গে তার প্রণয়কে বহু বছর ধরেই স্রেফ গুঞ্জনের আওতায় ফেলা হলেও যত সময় যাচ্ছে ততই জোরালো হচ্ছে সেই সম্পর্কের বাস্তবতা। মনরো তখন নিঃসঙ্গ। তৃতীয় বিয়েটাও ভেঙে যাবে! অথচ বিশ্বময় খ্যাতি। গোটা দুনিয়ার কাছে অপ্রতিরোধ্য ‘রোমান্স সিম্বল’। তৎকালীন পৃথিবীর প্রবল খ্যাতিমান এই দুই মানুষ কাছাকাছি এলেন। লুকিয়ে পরচুলা পরে নাকি কেনেডির সঙ্গে দেখা করতেন সুন্দরী মনরো। স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন তিনিই হবেন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি।
১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্টের আগাম জন্মদিন পালনের উৎসবে ফার কোট ও স্কিন টাইট গাউনে লাস্যময়ী পৃথিবীর মনরো মাইক্রোফোনে বলে উঠেছিলেন, ‘হ্যাপি বার্থডে মিস্টার প্রেসিডেন্ট। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।’ কে জানত কোনো পাবলিক ইভেন্টে সেটাই মনরোর শেষ উপস্থিতি। আড়াই মাস পরে লস অ্যাঞ্জেলসে সন্ধান মিলেছিল মনরোর নিথর শরীরের। আত্মহত্যার আগে শেষ ফোনটা নাকি তিনি করেছিলেন তার প্রিয় পুরুষটিকেই।
কেনেডির পরই নিঃসন্দেহে চলে আসে রিচার্ড নিক্সন প্রসঙ্গ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে অশালীন মন্তব্যের জন্য রাতারাতি অনেক বেশি আলোচিত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এহেন নিক্সন মারিয়ানা লিউ নামের এক হোস্টেসের প্রেমে নাকি হাবুডুবু খেতে শুরু করেছিলেন। গত শতকের ছয়ের দশকের শেষে তার ও মারিয়ানার প্রেমকাহিনি গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছিল।
এফবিআইয়ের কাছে খবর ছিল, মারিয়ানা নাকি গুপ্তচর! যদিও তেমন কোনো প্রমাণ শেষ পর্যন্ত মেলেনি। কোনোদিন প্রকাশ্যে নিক্সনের সঙ্গে তার প্রেমের কথা স্বীকার করতে দেখা যায়নি মারিয়ানা লিউকে। নিক্সনও ছিলেন স্পিকটি নট। কিন্তু সেই গুঞ্জন আজও রয়ে গেছে। পাশাপাশি আরেকটা গুঞ্জনও রয়েছে। নিক্সন নাকি সমকামী। যদিও তার প্রাক্তন চিফ অফ স্টাফের সরস দাবি, স্মার্ট ও আকর্ষণীয় মেয়েদের সঙ্গে ফ্লার্ট করতে এতই ব্যস্ত থাকতেন নিক্সন সাহেব, যে পুরুষদের সঙ্গে ভিন্ন আলাপ করার কোনো শক্তি তার আর অবশিষ্ট থাকত না।
কেনেডি আর নিক্সনের মাঝের সময়ে বছর ছয়েক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকা লিন্ডন বি জনসনও কেচ্ছার জৌলুসে কম যান না। বছর একুশের ম্যাডেলিন ব্রাউনের সঙ্গে তার অভিসার নিয়ে কিছু কম হইচই হয়নি। এতেই শেষ নয়। আরও বহু সম্পর্ক নাকি ছিল তার। এবং সেসব নিয়ে রীতিমতো গর্বিত ছিলেন তিনি। তার জীবনীকার লিখেছিলেন, কেউ তার সামনে কেনেডির বহু নারীসঙ্গের প্রসঙ্গ তুললে তিনি নাকি মেজাজ হারাতেন। রীতিমতো টেবিল চাপড়ে বলে উঠতেন, কেনেডি স্বেচ্ছায় যতগুলো সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তার থেকে বেশি সম্পর্কে তিনি নাকি দুর্ঘটনাক্রমেই জড়িয়ে পড়েছেন!
এখানেই শেষ নয়, নিজের পুরুষাঙ্গ নিয়ে রীতিমতো ‘অবসেশন’ ছিল ভদ্রলোকের। ভালোবেসে নিজের সেই প্রিয় অঙ্গের নাম দিয়েছিলেন জাম্বো। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক ও স্টাফদের নাকি প্রায়ই সেটা প্রদর্শন করে জানতে চাইতেন, ‘এত বড় দেখেছ নাকি কখনও?’
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের এই কেচ্ছা-কাহন আমরা শেষ করব বিল ক্লিন্টনের কথা দিয়েই। বিলের সঙ্গে মনিকা লিউয়েনস্কির প্রেমকাহিনি অনেকের স্মৃতিতেই টাটকা। পলা জোন্স, জেনিফার ফ্লাওয়ার্স, ক্যাথলিন উইলির মতো বহু নারী তার বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি হইহই হয়েছিল মনিকা এপিসোড ঘিরেই।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলা বিলের সঙ্গে তার থেকে প্রায় ৩০ বছরের ছোট বছর বাইশের এক তরুণীর সম্পর্ক নাকি দানা বেঁধেছিল গত শতকের নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। হোয়াইট হাউসে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে আসা মনিকার সঙ্গে কী করে খোদ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হল তা নিয়ে ট্যাবলয়েডগুলো যে কত নিউজ প্রিন্ট খরচ করেছে তার ইয়ত্তা নেই। মনিকা নাকি এক সহকর্মীকে ফোনে তাদের সম্পর্কের কথা বলেছিলেন। সেখান থেকেই ফাঁস হয়ে যায় সব।
১৯৯৮ সালে ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয় ক্লিন্টনকে। তিনি অবশ্য প্রথম থেকেই বলে এসেছেন, মনিকার সঙ্গে তাকে জড়িয়ে যা শোনা যাচ্ছে সব নির্জলা মিথ্যা। পরে মার্কিন কংগ্রেসে বিচার প্রক্রিয়ার শেষে নির্দোষই প্রমাণিত হন তিনি। তবু কিছু প্রশ্ন রয়েই গেছে, যাদের ‘উত্তর মেলে নাই’।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ