বিএনপির নেতা-কর্মীদের গুম, খুন এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট ওসি, এসপিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে সারা দেশে চিঠি পাঠিয়েছে দলটি।
চিঠিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সাথে জড়িত, বাদী, তদন্তকারী বা তদারককারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নাম ও পরিচয় জানাতে বলা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে এই চিঠিটি সকল জেলা ও মহানগরের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতোদিন ধরে সারা দেশে মামলা, গ্রেপ্তার এবং আসামীর তথ্য সম্পর্কে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তথ্য সংগ্রহ করতো। কিন্তু এখন থেকে সেসব মামলার বাদী, তদন্তকারী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ওসি এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ শুরু করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র মোঃ মনজুর রহমান রাজনৈতিক কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব থেকে পুলিশ যা করনীয়, পুলিশ শুধুমাত্র সেটাই করে।’
কী বলা হয়েছে চিঠিতে
বাংলাদেশের সব মহানগর ও জেলা পর্যায়ের সভাপতি বা আহবায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর গত ১৮ই মে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির প্যাডে পাঠানো ওই চিঠিতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে খুন-গুম, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পাঠাতে বলা হয়েছে।
যে সব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে
সেখানে যেসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তা হলো মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সেই সার্কেলের এএসপি বা এসি, এসপি বা ডিসিদের নাম ও পরিচয়, মিথ্যা বা গায়েবি মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম ও পরিচয় এবং সেই মামলার তদন্তকারীদের তথ্য।
এসব তথ্য সংগ্রহ করতে দলটিতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিএনপি ইনফো সেল নামে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। পনের দিনের মধ্যে সেই সেলের কাছে এসব তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।
দলটির দাবি অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত সারাদেশে দলটির নেতা-কর্মীদের নামে যেসব মামলা হয়েছে, তার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এসব মামলায় আসামী ৩৬ লাখ। আর কারাগারে আটক ২০ হাজার।
গত জানুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু মোহাম্মদ মাসুম বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে মোট ২৭টি মামলা আছে।
তিনি বলছিলেন, “প্রতি মাসে মামলা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কাজে বাধা দেয়া ইত্যাদি অভিযোগে মামলা। যেই মামলার কোন ভিত্তি নাই। রূপগঞ্জ থানায় এমন কোন নেতা-কর্মী নাই, যার বিরুদ্ধে মামলা হয় নাই।”
কেন এসব তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি?
বিএনপির পাঠানো চিঠিতে এসব তথ্য সংগ্রহের কোন কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ”বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে মিথ্যা এবং গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে গুম খুন করা হয়েছে। আমরা সেসব মামলা আর এর সাথে জড়িতদের তথ্য সংগ্রহ করে রাখছি। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে এসব তথ্য ব্যবহার করা হবে।”
দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কয়েকটি কারণে এসব তথ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
এসব ঘটনায় বিচার পেতে ভবিষ্যতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মূলত এসব তথ্য ব্যবহার করা হতে পারে। তখন যাতে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে কালক্ষেপণ না হয়, সেজন্য এখন থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে এই উদ্যোগ শুরু করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে দলের ওপর নির্যাতন, মিথ্যা বা গায়েবি মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্যরা জড়িত রয়েছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা হবে।
একজন বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, সামনের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই কর্মকর্তাদের যাতে দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেজন্য এখন থেকেই তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বিএনপি এমন সময় এসব তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে, যার কয়েকমাস পরেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সুষ্ঠূ নির্বাচনে বাধা তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
অনেকেই মন্তব্য করছেন, ক্ষমতায় আসার পর এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি।
বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে এসব তথ্য প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যবহার করা হবে কিনা, জানতে চাওয়া হলে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি করি না। আমরা কোন প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি না।
এসডব্লিউএসএস/১৬২০
আপনার মতামত জানানঃ