বিএনপির নালিশের ওপর ভর করে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মাথা না ঘামানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি–জামায়াত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে তার প্রতিবাদে এ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ।
কূটনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই নালিশ করুক, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, পক্ষপাতহীন এবং অংশগ্রহণমূলক একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে। আপনাদের কারও এ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। হাঁটু ভাঙা, কোমর ভাঙা (বিএনপি) দল যতই কাকুতি-মিনতি করুক, এদের প্রলাপ শুনে লাভ নেই।’
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কয়েক মাস ধরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা। তাঁদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। এসব আলোচনায় তাঁরা নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে।
যদিও বিএনপি এসব বৈঠকে জানিয়েছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।
কূটনীতিকদের দেশের জনগণের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কথা বলুন জনগণের সঙ্গে গিয়ে। এ নগরীতে জনস্রোতের মধ্যে কূটনীতিক বন্ধুরা আপনারা সিভিলে গিয়ে কথা বলুন। মানুষ কী চায়।’
প্রায় এক যুগ বিএনপির সম্মেলন হয় না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে কোনো সম্মেলন ছাড়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনটা সম্মেলন হয়েছে। ঘরে যাদের গণতন্ত্র নেই, তারা দেশে গণতন্ত্র কীভাবে দেবে? তিনি বলেন, ‘কূটনীতিক বন্ধুদের বলব, এই কথাটা তাদের জিজ্ঞেস করুন। তাদের ঘরে গণতন্ত্র নেই কেন?’
নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ থেকে কেনাকাটা না করার যে বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যার সাহস আছে। কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা সত্যের প্রশ্নে আপস করেন না। অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর।’
এখন ওয়ার্মআপ, ফাইনাল খেলা পরে
বিএনপির আন্দোলনের ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন ওয়ার্মআপ ম্যাচ হচ্ছে। আসল খেলা হবে আরও পরে। এ জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি আসলে অন্তিমযাত্রা। ওপরে ওপরে পদযাত্রা, তলে তলে সহিংসতার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আগুন–সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বিএনপি নেতারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। শেখ হাসিনার পতন ঘাটাতে তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বলছে আওয়ামী লীগ রোষানলে পড়বে। তারা জনরোষে পড়েছে? আবারও মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে এলে তাদের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি হবে। খেলা হবে। আসল খেলা এখনো বাকি।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, প্রস্তুত থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচনও ঘনিয়ে আসছে। তারা (বিএনপি) যত চেষ্টাই করুক, বাংলাদেশে সময় আর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সংবিধান আর নির্বাচন কারও জন্য বসে থাকবে না। বাংলাদেশের সংবিধানই বলে দেবে কীভাবে নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না। শেখ হাসিনার পেছনে বাংলাদেশের মানুষ আছে।’
বিএনপি আন্দোলনে ও নির্বাচনে পরাজিত হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগেরবার ড. কামাল হোসেন ছিলেন। এবার তো তিনিও নেই। আন্দোলনেও নেতা নেই, নির্বাচনেও নেতা নেই।
গুজবের কারখানা
বিএনপির দুটি গুজবের কারখানা আছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি গুজবের কারখানা গুলশানে (বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়)। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে। আরেকটি মিথ্যার কারখানা হচ্ছে নয়াপল্টনে (বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়)। সেখানে মাইক লাগিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে অনবরত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি করছে না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যেখানেই আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়েছে, সেখানেই বিএনপির সহযোগী সংগঠন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে পণ্ড করে দিয়েছে। এখন তো তা হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সালের তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর পার করে দেয়। আন্দোলন করে তাদের নির্বাচন করতে বাধ্য করা হয়েছে। বিএনপি কোন মুখে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়?
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, ত্রাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর।
এসডব্লিউ/এসএস/০৮০০
আপনার মতামত জানানঃ