প্রাচীন আরব উপদ্বীপ নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। প্রায় ১১,৭০০ বছর আগে শুরু হওয়া হোলোসিনের সময় আরব উপদ্বীপের জলবায়ু ছিল অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত এবং আর্দ্র। এটি গাছপালা বিকাশ এবং মানব বসতির ইঙ্গিত দেয়। এই সময়কে ‘সবুজ আরব’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এবং এটি প্রায় ৪,৫০০ থেকে ২,০০০ বছর আগপর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
আরব উপদ্বীপ যে তেলের বিশাল ভাণ্ডার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তেল হলো মৃত মাইক্রোস্কোপিক উদ্ভিদ এবং প্রাণীর দেহাবশেষ, যারা লক্ষ লক্ষ বছর আগে মহাসাগর, নদী বা হ্রদে বাস করতো। অক্সিজেনের অভাব মৃত অণুজীবগুলো এসব হাইড্রোকার্বনে পরিণত হয়। আরব উপদ্বীপের দেশগুলোতে বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুদ রয়েছে।
এই ধরনের বিশাল তেলক্ষেত্র থাকার অর্থ হলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে, এমনকি শেষ বরফ যুগ শুরু হওয়ার আগে, আরব উপদ্বীপটি আজকের মতো শুষ্ক অনুর্বর ভূমি ছিল না; বরং হ্রদ এবং নদী অববাহিকার স্বর্গ ছিল। আর সেখানে বিচরণ করতো বহু প্রাণী। ছিলো মানুষের বসতি।
এবার সেই আরব উপদ্বীপের ওমানে প্রত্নতাত্ত্বিকরা একটি পাথরের সমাধিতে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে কবর দেওয়া কয়েক ডজন মানুষের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন এই ভাবে।
পাথুরে জমিতে গম্বুজ ভাঙতেই সকলের চক্ষু চড়কগাছ। একবার খুঁড়তেই কয়েক ডজন মানুষের দেহাবশেষ উঠে এল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা আরব উপদ্বীপের ওমানে একটি পাথরের সমাধিতে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে কবর দেওয়া কয়েক ডজন মানুষের দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন এই ভাবে।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানান, মধ্য আল উস্তা প্রদেশের নাফুনের কাছে সমাধিটি ওমানে পাওয়া প্রাচীনতম মানবসৃষ্ট কাঠামোর মধ্যে একটি। সমাধিক্ষেত্রটি উপকূলের পাশে। এই এলাকাটিকে পাথরের মরুভূমিও বলা হয়। প্রাগের চেক প্রজাতন্ত্রের ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজির একজন প্রত্নতাত্ত্বিক জানিয়েছেন, এই কবর কবে কার তা জানতে পারা সম্ভব হয়নি এখনও।
ড্যানিয়েলিসোভা ইনস্টিটিউট তরফে একদল গবেষক এই সমাধিতে খননের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যা চেক একাডেমি অফ সায়েন্সেস (সিএএস) এর অংশ। সমাধিটি প্রায় ১১ বছর আগে স্যাটেলাইট ফটোগ্রাফে আবিষ্কৃত হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন এটি ৫০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাধির দেয়ালগুলি পাতলা পাথরের স্ল্যাবগুলির সারি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল, যাকে অ্যাশলার বলা হয়, ভিতরে দুটি বৃত্তাকার সমাধি কক্ষ পৃথক অংশে বিভক্ত। সমাধি কক্ষে বেশ কিছু “হাড়ের গুচ্ছ” পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত করে যে মৃতদের সমাধিতে জমা করার আগে পচন ধরে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
মূল সমাধির পাশে একটি ছোট সমাধিতে অনুরূপ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে; প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন এটি কিছুটা পরে নির্মিত হয়েছিল। ড্যানিয়েলিসোভা বলেন, এমন প্রমাণ রয়েছে যে সেখানে মৃতদের বিভিন্ন সময়ে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং হাজার হাজার বছর পরে বসবাসকারী সামাদ সংস্কৃতির লোকদের তিনটি কবর কাছাকাছি পাওয়া গেছে।
পরবর্তী পর্যায়ে মানব দেহাবশেষের নৃতাত্ত্বিক এবং জৈব রাসায়নিক মূল্যায়ন করা হবে – যেমন আইসোটোপ বিশ্লেষণ, বিভিন্ন মূল উপাদানের নিউক্লিয়াসে ভিন্ন নিউট্রনগুলিকেও পরীক্ষা করা হবে।
এসডব্লিউএসএস/১৮০০
আপনার মতামত জানানঃ