কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের বিপক্ষে কখনোই আমাদের অবস্থান নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের যে কর্মকাণ্ড, সার্বিক স্বার্থে যদি নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়, সেই জিনিসগুলো আমরা দেখব।
সোমবার নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’র (আরএফইডি) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের পুলিশি বাধার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন অনুমতি দেয়ার পরেও পুলিশ ঢুকতে না দিলে সিরিয়াসলি নিতে হবে আমাদের।
পুলিশ ঢুকতে না দিলে ছবি তুলে দেখানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের ক্যামেরা থাকবে। তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে পুলিশের সঙ্গে সেই দৃশ্য আপনারা ক্যামেরায় ধারণ করে আমাদের অবহিত করতে পারেন। যতটুকু ক্ষমতা আমরা গণমাধ্যমকে দেবো, সেটা যেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্য হয়তো কমিশন একমত হবে। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিষয়গুলো দেখব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, আপনাদের দায়িত্ব পালনে বিধি-বিধান সহায়ক হোক। আপনারা আরও উদার, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে চিত্র, সংবাদে ধারণ করে যদি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তাহলে আগামী নির্বাচন দেশবাসীর কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, যতই সাংবাদিকদের বাধা দেয়া হবে ততই উনাদের মনে হবে-ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। এ ধরনের একটা ভাব সৃষ্টি হতে পারে।
আমি বিশ্বাস করি স্বচ্ছতা লাগবে। স্বচ্ছতা না হলে আমরা আবারও গত নির্বাচন যেভাবে বিতর্কিত হয়েছে হয়তো পুরোটাই সত্য নয়…কাজেই স্বচ্ছতার বিষয়টাতে আমাদের জোর দিতে হবে।
সরকার স্বচ্ছতা বিশ্বাস করলে ও ভালো নির্বাচন চাইলে ভোটের দিন নেটওয়ার্কের গতি কমিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। স্বচ্ছতার অভাবে একাদশ সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেজন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চান তিনি
উল্লেখ্য, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, স্লো করা যদি অপকৌশল হিসেবে করা হয়, তাহলে নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত করবে। এটা সরকারের অনুধাবন করা উচিত। সরকার যদি স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করে, নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিশ্বাস করে, তাহলে নির্বাচনের দিন এ জিনিসগুলো না করলেই বোধ হয় ভালো হবে। কেননা এতে সন্দেহের উদ্বেগ হবে। অনেকেই ভাববেন অপকর্মের জন্যই এটা করা হয়েছে।
অন্য এক প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের কর্তৃত্ব খর্ব করা ঠিক হবে না। তিনি ভোটের দিন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে থাকেন। তবে তিনি কোনো অপকর্ম করলে আইনে বিধান আছে। এতে কোনো ঘাটতি থাকবে না।
এর আগে সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যে প্রজ্ঞাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। তারা এই প্রজ্ঞাপনকে সরকারের দুরভিসন্ধি ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের নতুন হাতিয়ার হিসেবে বর্ণনা করে।
একই সঙ্গে তারা বলেছে, এটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংবাদমাধ্যমের ওপর আরেকটি খড়গ। তারা এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছিল।
তথ্য পরিকাঠামো হলো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক, যেখানে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে সাত বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডই দেওয়া যাবে।
আইসিটি বিভাগ জানায়, এই তথ্য পরিকাঠামোয় জনগণের তথ্যপ্রাপ্তিতে ব্যাঘাত ঘটবে না। তবে এই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে। তালিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ, বিভ্রান্তিকর ও অবিবেচনাপ্রসূত বলে আখ্যা দিয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর মাধ্যমে আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা জানিয়েছিল সংস্থাটি।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ