ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী(বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা বেশ পুরনো। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক আন্দোলন বিক্ষোভে এসব বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল মানবধিকার সংগঠন এবং বাংলাদেশি নাগরিকেরা। অনেকেরই অভিমত যে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নাগরিকদের উদ্দেশ্যজনিত কারণে নির্বিচারে হত্যা করে থাকে। গত কয়েকদিন আগে অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন সীমান্ত নিহত হওয়ারা আদতে একেকজন সন্ত্রাসী, মাদক চোরাকারবারি। এবার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীদের এসব সন্ত্রাসী চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দায়িত্ব দিলেন বাংলাদেশ।
আজ বুধবার(৩০ ডিসেম্বর) পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মধ্যে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরামের সঙ্গে আমাদের কিছু দুর্গম এলাকা আছে, যেখানে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা আছে। আমাদের কাছে কিছু গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে যে অপরাধ করেই সন্ত্রাসীরা সেখানে আশ্রয় নেয়। আবার প্রতিবেশী দেশ থেকেও সেখানে এসে আশ্রয় নেয়। সব কটি বন্ধ করার জন্য আমরা ত্রিমাত্রিক বাহিনী করেছি। আমাদের সে সক্ষমতা আছে। আমরা বর্ডার সড়ক তৈরি করছি। সেটা হয়ে গেলেই এ ধরনের সমস্যা আর থাকবে না।’
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সম্মেলনে সন্ত্রাসী ক্যাম্পের প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। আমরা ভারতকে অনুরোধ করেছি যেখানে যেখানে ক্যাম্প আছে, সেখানে অভিযান চালাতে। তারা আমাদের বলেছে, অভিযান করে তারা আমাদের জানাবে।
এর আগে অবশ্য ভারতের অনুরোধে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল।
গত ২১ ডিসেম্বর আন্ত:সীমান্ত অপরাধ বন্ধ করার জন্য ভারতের গুয়াহাটিতে দুই বাহিনীর মহাপরিচালকরা বৈঠক করেছিলেন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অপরাধ বন্ধ করা গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানিও আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে, এই কৌশলগত অবস্থান নিয়েই ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের বিজিবি-র সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু ও মাদক পাচার-সহ নানা ধরনের সমস্যা আছে। ভারতীয়রা গরু পাচার করতে চায়, বাংলাদেশিরা নিতেও চায়। কখনও কখনও এই সশস্ত্র পাচারকারীরা বিশ-তিরিশজনের দল বেঁধে এলে বিএসএফের গুলি করতে বাধ্য হয় বলে বৈঠকে জানিয়েছিলেন বিএসএফ।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে এ দায়িত্ব অর্পনের বিরুদ্ধে জনমনে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। তারা মনে করেন, ফেলানির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমনিতে বিএসএফ সীমান্তে অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন। এই সুযোগে নিরাপরাধ মানুষের প্রাণবধের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে জনমনে। চলতি বছরে বিএসএফের হাতে সীমান্তে প্রাণহানির ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে বলে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ। বাংলাদেশ কর্তৃক বিএসএফকে দেওয়া এই দায়িত্ব ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
অবশ্য অপরাধ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সীমান্তে ঘটা হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রায় সকলেই কোনো না কোনো অপরাধের সাথে জড়িত। মাদক পাচার, চোরাকারি থেকে শুরু করে দেশের অনেক কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পার হতে গিয়ে এসব হত্যাকানণ্ডের শিকার হয়। এবিষয়ে বাংলাদেশের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সুংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, আসলে আমরা দেশের মূল ভূখন্ডের লোকজন বর্ডার এলাকাটা বুঝিই না। যখন আমরা ফিল্ডওয়ার্কে সীমান্ত এলাকায় যাই ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলি তখন বুঝি সীমান্তের ছবিটা আসলে একেবারেই অন্য রকম।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭২৩
আপনার মতামত জানানঃ