মাদকাসক্ত, অনৈতিক সম্পর্ক, চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ, শৃঙ্খলাভঙ্গসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন বিমান বাহিনীর ৭ সদস্য।
চাকরিচ্যুত সদস্যরা হলেন, বিডি/৯৩৭৭ স্কোয়াড্রন লিডার আলী হায়দার ফিনান্স, বিডি/৪৬৭৬৪৫ কর্পোরাল মুরাদ হাসান রেডিও ফিটার, বিডি/৪৬৬৫৫৫ সার্জেন্ট জাহিদ হাসান খান ইএন্ডআই ফিটার, বিডি/৪৭০৫৭৭ কর্পোরাল মো. রকিবুল ইসলাম, বিডি/৪৬৯৮৯৭ কর্পোরাল খোরশেদ আলম-এটিসিএ, এমওডিসি (বিমান) বিডি/৫০১৮১৮ কর্পোরাল মো. তহিদুল ইসলাম এবং অসামরিক কর্মচারী টি/৬২৩ মো. রিয়াজ উদ্দিন।
বিমান বাহিনীর এ সকল সদস্যদের চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি তাদেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং তাদের আওতাভুক্ত এলাকায় কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এসকল চাকরিচ্যুত সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় তথ্য প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, স্কোয়াড্রন লিডার আলী হায়দার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদরদপ্তর (ইউনিট) এ কর্মরত অবস্থায় বার্ষিক নিরীক্ষা ফরমে মিথ্যা তথ্য প্রদান ও অনৈতিক-সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে গত ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২, ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। বিমান বাহিনীর সদরদপ্তর কর্তৃক এই কর্মকর্তাকে কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করা হয়। কর্পোরাল মুরাদ হাসানকে মাদকদ্রব্য পরিবহন, মাদকের তথ্য গোপন ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বৈধ আদেশ পালনে ব্যর্থতার জন্য ডিস্ট্রিষ্ট কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে গত ৯ জুন ২০২২ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি তাকে কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করা হয়।
সার্জেন্ট জাহিদ হাসান খানকে টাকার বিনিময়ে বিমান বাহিনীতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রিক্রুট নম্বর ৫০৩০৭, এসি-২ ফারুক হোসেন এর পরিবারের কাছ থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং রিক্রুট নম্বর-৫০৩৫৭, এসি-২ জোনারুল ইসলাম এর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা অনৈতিকভাবে গ্রহণ করেন। উক্ত অপরাধের প্রেক্ষিতে বিমান বাহিনীর এই সদস্য সার্জেন্ট জাহিদকে জেনারেল কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে গত ২৩শে এপ্রিল ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ডসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।
কর্পোরাল মো. রকিবুল ইসলামকে মাদকদ্রব্য (ইয়াবা) সেবক ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে জেনারেল কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে গত ৬ই জুন ২০২২ ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ডসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্পোরাল খোরশেদ আলমকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে পরিশোধ না করার কারণে ডিস্ট্রিষ্ট কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে গত ১৬ই জুন ২০২২ ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এছাড়াও কর্পোরাল মো. তহিদুল ইসলামকে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত কারণে জেনারেল কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে এ বছরের ২৩শে এপ্রিল ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ডসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অসামরিক কর্মচারী পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. রিয়াজ উদ্দিনকে কক্সবাজার এ কর্মরত থাকাকালীন সময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অবৈধ মাদক ব্যবসা ইয়াবার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি সময়ে বিমান বাহিনী র্যাব, পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদক গ্রহণ, অর্থ আত্মসাৎ এবং নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এসব অভিযুক্তদের বাহিনীর পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি শেষে অনেককেই ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত করাসহ কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে বিমানবাহিনী সহকারী পরিচালক মো. নূর ইসলামকে (ডেস্ক) ফোন দিলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
প্রতিবেদনটি লিখেছেন সূখী ও অনুসন্ধান করেছেন জুলকারনাইন সায়ের (সামি)
আপনার মতামত জানানঃ