করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী প্রস্তুতি ব্যবস্থা জোরদার করতে ২৭ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক মহামারি প্রস্তুতি দিবস’ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। মহামারি প্রতিরোধে সতর্কতা, প্রস্তুতি এবং অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য আজ এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ (রোববার) বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
আজ ‘আন্তর্জাতিক মহামারি প্রস্তুতি দিবস’ উপলক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাধানম গ্যাব্রিয়েসুস এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ইতিহাস সাক্ষী, এটাই শেষ মহামারি নয়। অতিমারি আমাদের জীবনের অঙ্গ। এই মহামারি মানুষ, পশু, এবং পরিবেশের মধ্যে গভীর সম্পর্কের কথা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ের দেখিয়ে দিয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরিবেশ পশুপাখি সবকিছুর ওপর যে বিপদ নেমে আসছে সেটা আগে প্রতিরোধ করতে হবে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সভাপতি অধ্যাপক ডা: মো: নজরুল ইসলাম এবং জেনারেল সেক্রেটারি ডা: একেএম ওয়ালীউল্লাহ্ একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।এতে করোনা মোকাবিলায় শহীদ চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা অতি দ্রুত প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। জটিল করোনা রোগীদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস আরো সুলভ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি করেন তারা।
বিবৃতিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সাধারণ মানুষের করোনা চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার সরকারি তহবিল থেকে বহন করুন। চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন এবং সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবার জন্য ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করুন। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করারও আহবান জানানা তারা।
মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, এ বিষয়ে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও তাত্তি¡ক জ্ঞান থাকলেও প্রয়োজনীয় সম্পদ ও জনবলের প্রবল ঘাটতি রয়েছে। দুর্বলতা আছে সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও। মহামারি নিয়ন্ত্রণে অনেক ম্যানুয়েল তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও তাত্ত্বিক জ্ঞান আছে। তবে সমন্বয়, সম্পদ ও জনবলের অভাব আছে। আর আমাদের জনস্বাস্থ্য বিভাগ কোনো মহামারি মোকাবিলার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। এককথায় সামর্থ্যহীন। কাগজে কলমে পরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়নে এবং নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পরিস্থিতি বিপজ্জনকের দিকে আগানোর আগেই সরকারের প্রস্তুতিকে আরো জোরদার করার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞগণ। তারা মনে করেন, করোনার মতোই দেশের আইন শৃঙ্খলা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে সরকারি নির্দেশনা মানছেন না অনেকেই। মহামারি করোনাকে এক রকম হেলায় রেখেই সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের করোনা মোকাবেলায় তেমন কোনো তোড়জোর নেই মনে করেন তারা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনার অনুপ্রবেশ বন্ধেএয়ারলাইন্স সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সরকার যেসব দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় তার সিকি ভাগও মানছেন না সংশ্লিষ্টরা। করোনা পরিস্থিতির এহেন টালমাটালের জন্য সরকারের উদাসিনতাকে দায় দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা মনে করেন, আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসাই মুখ্য। প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনাও মহামারি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। অবকাঠামো ও নীতিগতভাবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জনস্বাস্থ্যর বিষয়টি উপেক্ষিত। আর জনস্বাস্থ্যর বিষয়টি উপেক্ষিত রেখে মহামারি প্রতিরোধ সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা। মহামারি প্রতিরোধ শুধু বিজ্ঞানীদের কাজ নয়। এর জন্য রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে হয়। মহামারি মোকাবিলায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এ ছাড়া মহামারি বা সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেই আবার উদাসীন হওয়ার যে মনোবৃত্তি তা থেকেও বের হয়ে আসা দরকার বলে মনে করেন।
এসডাব্লিউ/এমএন/এসকেএইচ/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ