আজ থেকে ৪০ কোটি বছর আগের কথা। ডেভোনিয়ান যুগে (এই সময়কালটি প্রায় ৪১৬ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়েছিল এবং প্রায় ৩৫৯ মিলিয়ন বছর আগে শেষ হয়েছিল) ধারাবাহিক গণ-অবলুপ্তির সম্মুখীন হয়েছিল পৃথিবী। তবে স্থলজ প্রাণীরা নয়, বরং উজাড় হয়ে গিয়েছিল সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের একটা বড়ো অংশ। প্রাণ হারিয়েছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি সামুদ্রিক প্রজাতি।
কিন্তু কী কারণে এই গণঅবলুপ্তির সাক্ষী হয়েছিল সমুদ্রজগৎ? অদ্ভুত এক উত্তর এই প্রশ্নের। আর এই অদ্ভুত উত্তর হল গাছ। হ্যাঁ, উত্তরটা একটু অবাক করার মতোই।
ভূমিতে গাছপালা এবং পোকামাকড়ের সৃষ্টি হয় ডেভোনিয়ান যুগে। ওই সময়ে গাছপালা বেঁচে থাকার জন্য পানি ও বীজ সঞ্চয় করার জন্য অভ্যন্তরীণ ভাস্কুলার সিস্টেম তৈরি করে। তখনও তারা ভূমিতে বেড়ে উঠা তৃণভোজী প্রাণীদের কবলে পড়েনি। পৃথিবীতে উদ্ভিদের এমন বিস্ফোরক হারে বৃদ্ধি বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা হ্রাস করতে থাকে। এতে করে দিন দিন শীতল হতে শুরু করে পৃথিবী।
ডেভোনিয়ানদের বিলুপ্তির পর, টেট্রাপডরা প্রথম উভচর প্রাণীর পূর্বপুরুষ, পরে সরীসৃপ, পাখি এবং শেষে স্তন্যপায়ী প্রাণী আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে।
আজ যেখানে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণের কথা প্রচার করে চলেছেন পরিবেশবিদরা, সেই উদ্ভিদের বিবর্তনই একসময় বদলে দিয়েছিল পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের পরিমণ্ডল।
সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়, পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায়।
ডেভোনিয়ান যুগের আগে পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে যে-সমস্ত গাছের অস্তিত্ব ছিল, তাদের মূল বা শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করত না। পাশাপাশি সেগুলি জন্মাত মূলত জলজ পরিবেশেই। ৩৬ থেকে ৪০ কোটি বছর আগে ব্যাপকভাবে বদলে যায় গাছের প্রকৃতি ও চরিত্র। যার অন্যতম কারণ গাছের মূলের বিবর্তন।
আগের তুলনায় গাছের শিকড় দৃঢ়, শক্ত ও দীর্ঘ আকার ধারণ করায়, জলজ পরিবেশের ওপর নির্ভরতা কমে গাছের। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও খনিজ মাটির তলা থেকেই আহরণ করতে শুরু করে উদ্ভিদ। এই সময়কার জীবাশ্মের বিশ্লেষণে গবেষকরা লক্ষ করেন, হ্রদ ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলেই সে-সময় বেশি প্রাধান্য দেখা যেত বড়ো বৃক্ষের।
গাছের এই বিবর্তনের কারণেই সামুদ্রিক ও জলজ পরিবেশে ক্রমশ বাড়তে থাকে ফসফরাসের মাত্রা। একটা সময় যা পুষ্টি হিসাবে সরাসরি শোষণ করত জলজ উদ্ভিদরা। পাশাপাশি এই মাত্রাতিরিক্ত ফরফরাসের উপস্থিতি ত্বরান্বিত করে শৈবালের বংশবৃদ্ধিকে।
দ্রুত শ্যাওলায় ছেয়ে যায় জলজ পরিবেশ। কমে যায় জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণও। ফলে, সবমিলিয়ে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবনধারণ।
কিছুদিন আগের কথা। একাধিক সংবাদপত্রে নজর কেড়ে নিয়েছিল ভারতের বিভিন্ন এলাকায় মাছের গণ-মৃত্যুর ঘটনা। গবেষণায় উঠে এসেছিল শৈবালের বৃদ্ধি এবং অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পাওয়াই তার অন্যতম কারণ।
আজ থেকে ৪০ কোটি বছর আগেও এই একই ঘটনা ভিন্নভাবে আঘাত হেনেছিল প্রাণীজগতে, তা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিল জিএসএ বুলেটিনে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র।
উল্লেখ্য, ডেভোনিয়ান যুগের সমাপ্তি ঘটেছিল কয়েক কোটি বছর ব্যাপী। ইউরোপে ৩২ মাইল প্রশস্থ একটি গর্তের সন্ধান পাওয়া গেছে যেটিকে ডেভোনিয়ান যুগের একটি উল্কাপতনের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করছেন গবেষকরা। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন, পৃথিবীর কাছাকাছি একটি সুপারনোভা বায়ুমণ্ডলীয় ওজনকে হ্রাস করেছিল। তবে এটিকে এখনও পুরোপুরি গ্রহণ করেননি অনেক গবেষক। বরঞ্চ বিজ্ঞানীরা বলতে চান, এটি এমন এক সময়কাল ছিল যখন নতুন প্রজাতির বিবর্তনের জন্য তুলনামূলকভাবে কিছুটা ধীর গতির সাথে প্রাকৃতিকভাবে প্রাণীদের বিলুপ্তি ঘটেছিল।
এসডব্লিউ/এসএস/২১২৫
আপনার মতামত জানানঃ