দূর থেকে দেখেই মনে হতে পারে এটি বহু পুরনো একটি বাড়ি। আর তাতে প্রবেশ করলেই একটু চমকে যেতে পারেন। কারণ ঘরের দেওয়ালের গায়ে গায়ে রয়েছে বহু ধাতব সেল্ফ। সেগুলোতেই রাখা রয়েছে খানিকটা হলদেটে ধরনের বালতি। খুবই যত্ন করে রাখা হয়েছে বালতিগুলো; কারণ, সেগুলোই যে ঘরটির প্রাণ।
বালতিগুলোর মধ্যেই রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী। এই ধরনের একাধিক বালতি সেল্ফে সাজানো দেখলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে আসে। কৌতূহল সৃষ্টি হয় জানার যে, তার মধ্যে আসলে কী রয়েছে? উত্তরটা হল, মানুষের মস্তিষ্ক। শুনতে অত্যন্ত আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি।
কয়েক হাজার মানুষের মস্তিষ্ক সংগ্রহ করা হয়েছে ওই সংগ্রহশালাতে। না, এটা কোন গল্প নয় বাস্তবে এর অস্তিত্ব রয়েছে। ডেনমার্কের ইনস্টিটিউট অফ দ্য ব্রেইন প্যাথলজিতে গেলেই আপনি দেখতে পারবেন প্রায় ৯ হাজার ৪৭৯ টি মানুষের ব্রেন।
কোথা থেকে এল এত ব্রেন? কারাই বা দায়িত্ব নিয়ে সংগ্রহ করেছিল এই ব্রেনগুলো? এক্ষেত্রে নাম উঠে আসে দুজন চিকিৎসকের। তারা হলেন এরিক স্ট্রমগ্রেন এবং ল্যারুস এনার্সন। পরে যদিও তাদের সঙ্গ দিয়েছিলেন আরও এক প্যাথলজিস্ট নাড এজ লরেন্টজেন।
সালটা তখন ১৯৪৫। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। অনেকেই বলেন সেই সময় ইউরোপে নাকি শান্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান জানান দেয় যে, সেই সময় ইউরোপে মানুষের মধ্যে মানসিক অসুখ বাসা বাঁধতে শুরু করেছিল। ট্রমা, অ্যালজাইমার, পিটিএসডি এরকম আরও কত ধরনের মানসিক রোগ মানুষকে ঘিরে ধরেছিল।
তবে এটা বলা ভুল যে শুধু সেই সময় ইউরোপের মানুষের মধ্যে মানসিক রোগ দেখা গিয়েছিল। রোগ আগে থেকেই ছিল কিন্তু ওই সময়ে সেগুলি চিকিৎসকদের বিশেষভাবে নজর কেড়েছিল।
তাই ডেনমার্ক, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো দেশগুলি সিদ্ধান্ত নেয় তাদের দেশের নাগরিকদের মানসিক চিকিৎসার উপর জোর দেওয়ার। এই কারণেই ডেনমার্কে একটি মানসিক হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল। সেই হাসপাতালটির নাম দেওয়া হয়েছিল রিসকভ সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল।
সেখানে শুধুমাত্র মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করাই নয় মৃত্যুর পর মানসিক রোগীদের মস্তিষ্ক নিয়েও রীতিমতো চলতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে অবশ্য সরকারের অনুমতি ছিল। এমনকি এক সময় ডেনমার্ক সরকার নির্দেশ দিয়েছিল যে, মানসিক রোগীদের মৃত্যুর পর তাদের ফরেন্সিক পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক।
সেই ফরেন্সিক পরীক্ষার সময়ই ওই তিন চিকিৎসক মৃত মানসিক রোগীদের মস্তিষ্ক বের করে নিতে শুরু করেন। আর তারপর মাথা সেলাই করে নিথর মৃতদেহ তুলে দিতে থাকেন পরিবারের হাতে। যার কারণে কোনো পরিবারই জানতে পারেননি যে মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্ক রয়ে গিয়েছে সেখানেই।
১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এভাবে সংগ্রহ চলতে থাকে। শেষে জানা যায় রিসকভ হাসপাতালের বেসমেন্টে একটি ঘর রয়েছে, যেখানে সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষের মস্তিষ্ক।
পরবর্তীতে ২০১৭-১৮ সালে একটি বিল পাস করা হয় কাউন্সিল অফ এথিকসের। সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের বেসমেন্ট থেকে মস্তিষ্ক গুলোকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ইনস্টিটিউট অফ ব্রেইন প্যাথলজিতে। এখন মস্তিষ্ক গুলি সেখানেই রয়েছে।
যদিও কাউন্সিল নির্দেশ দিয়েছিল যে, ওই মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের উত্তরসূরীরা যদি অনুমতি দেন তবেই পরবর্তীতে সেই মস্তিষ্কগুলো সংরক্ষণ করা হবে। সেই নির্দেশ খাতায়-কলমেই রয়েছে। এখনও পর্যন্ত অনুমতি সংগ্রহ করার কোন কাজই শুরু হয়নি বলে দাবি সূত্রের। তবে ওই মস্তিষ্ক সংগ্রহশালা যে বিজ্ঞানের এক নতুন দিকের রাস্তা খুলে দিতে পারবে, তাতে সন্দেহ প্রকাশ করার কোন জায়গা নেই।
এসডব্লিউএসএস;১৮০০
আপনার মতামত জানানঃ