কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২০১৯ সালে সাময়িক অনুমোদন নিয়ে নগদ লিমিটেডের মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) কার্যক্রম শুরু কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেওয়া ওই অনুমোদন বাতিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের মহাপরিচালক, ডাক বিভাগের মহাপরিচালক, নগদ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে।
নগদের মোবাইলে আর্থিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা সংশ্লিষ্ট বিধানসম্মত নয় উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক ও মো. হাসান উজ জামান গত ২৭ অক্টোবর রিটটি করেন।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন মিয়াজী ও অ্যাডভোকেট মো. হাসানুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নগদ ২০১৯ সাল থেকে মোবাইল ফ্যাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ২০১৮ সালের এমএফএস রেগুলেশন অনুযায়ী এমএফএস লাইসেন্স পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র বাংলাদেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলো আবেদন করতে পারবে। এরপরে ২০২২ সালে ২০১৮ সালের এমএফএস রেগুলেশনকে বিলুপ্ত করে নতুন রেগুলেশন করা হয়। সে অনুযায়ী যে কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান এমএফএস লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে।
‘নগদ তাদের ব্যবসা পরিচালনার শুরু থেকেই বলে আসছে, তারা ডাক বিভাগের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নগদের রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টোক কোম্পানিজের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কোনো শেয়ার নগদের নেই।’
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদকে একটি সাময়িক এমএফএস লাইসেন্স প্রদান করে। যা ২০১৮ এবং ২০২২ সালের এমএফএস রেগুলেশন অনুযায়ী আইনসিদ্ধ নয়। এ কারণে অস্থায়ী লাইসেন্স নিয়ে নগদের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছেন।
উল্লেখ্য, আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
পরে আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী প্রথম আলোকে বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রোভাইডার হিসেবে ২০১৯ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এ সেবা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তখন একটি রেগুলেশন (প্রবিধান) ছিল। এতে বলা ছিল, এ সেবা দিতে হলে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত (অ্যাফিলিয়েটেড এনটিটি) থাকতে হবে।
তবে নগদ তখন কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ২০১৮ সালের রেগুলেশন বাতিল করে ২০২২ সালে আরেকটি রেগুলেশন করা হয়। এতে বলা হয়, শুধু ব্যাংক নয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও চলবে।
কিন্তু ২০২২ সালের আইন অনুযায়ী, নগদ কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে উল্লেখ করে আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী বলেন, ‘যদিও তারা বলছে, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান।
কিন্তু রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নগদের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেখা যায়, এখানে ডাক বিভাগের ১ শতাংশ শেয়ারও নেই। অথচ আইন বলছে, ৫১ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে, বোর্ডে নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হলে আদালত রুল দিয়েছেন।’
নগদের পক্ষ থেকে আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে তারা আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে।
নগদ বলছে, তাদের সঙ্গে ডাক বিভাগের চুক্তি আছে। চুক্তি অনুযায়ী, তারা প্রতিবছর আয় থেকে ৫১ শতাংশ ডাক বিভাগকে দিয়ে আসছে। এমনকি আজই ২০২১-২২ অর্থবছরের আয়ের ৫১ শতাংশ, সাড়ে চার কোটি টাকার চেক ডাক বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটা প্রমাণ করে, ডাক বিভাগ ও নগদের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ