ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে এবার এক স্কুলছাত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত সপ্তাহে আসরা পানাহি (১৬) নামের ওই ছাত্রীর স্কুলে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। তখন ক্ষমতাসীন ধর্মীয় নেতাদের প্রশংসামূলক গান গাইতে অস্বীকৃতি জানালে আসরাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
কো-অর্ডিনেটিং কাউন্সিল অব ইরানিয়ান টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের বরাতে এ তথ্য জানায় ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ইরানের কোঅর্ডিনেটিং কাউন্সিল অব ইরানিয়ান টিচার্স ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ অক্টোবর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আরদাবিল শহরের শাহেদ গার্লস হাই স্কুলে অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এসময় তারা একদল নারী শিক্ষার্থীকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রশংসা করে এমন একটি গান গাওয়ার আদেশ দেয়।
শিক্ষার্থীরা সেই আদেশ প্রত্যাখ্যান করলে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের মারধর করে। এতে অনেক নারী শিক্ষার্থী আহত হয় এবং পরে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এছাড়া অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর মারধরে আহত ১৬ বছর বয়সী আসরা পানাহিকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে গত শুক্রবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পানাহি মারা যায় বলে জানা গেছে।
এদিকে এই ঘটনায় ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন কর্মকর্তারা। তবে এরপরও পানাহির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে। তবে নিহত পানাহির চাচা হিসেবে চিহ্নিত একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে উপস্থিত হয়ে দাবি করেন, জন্মগত হৃদরোগের কারণে মারা গেছেন পানাহি।
হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ অক্টোবর মারা যায় মাহসা আমিনি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। ২২ বছর বয়সী ইরানি কুর্দি এই তরুণী গ্রেপ্তারের তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।
মূলত এরপর থেকেই টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে বিপর্যস্ত ইরান। ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ওই তরুণী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তবে ভুক্তভোগীর পরিবার এই বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেছে, তাকে নৈতিকতা পুলিশ মারধর করেছে।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে ইরানের স্কুলছাত্রীরা একটি শক্তিশালী শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। স্কুলছাত্রীদের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের একটি ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। এতে তাদেরকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাদের ছবি নামিয়ে ফেলা এবং শাসকবিরোধী স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের হিজাব বাতাসে ওড়ানোর দৃশ্য সামনে আসে।
এরপরই ইরানি কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে দেশজুড়ে স্কুলগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জোর করে ক্লাসরুমে প্রবেশ করে, সহিংসভাবে স্কুলছাত্রীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের অপেক্ষমান গাড়িতে তোলার পাশাপাশি স্কুল ভবনগুলোতে টিয়ারগ্যাসও নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
গত রবিবার পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ইরানের শিক্ষক ইউনিয়ন ‘নৃশংস ও অমানবিক’ অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে এবং ইরানের শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ নুরিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানের মানবাধিকার গোষ্ঠীর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ইরানজুড়ে বিক্ষোভে ২৭ শিশুসহ ২১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, ৩২ জন শিশু সহ অন্তত ২৪০ জনকে হত্যা করেছে ইরানের নিরাপত্তাবাহিনী। এছাড়া ১১১টি শহরজুড়ে অন্তত ৮ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০০
আপনার মতামত জানানঃ