নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বন্য শিম্পাঞ্জিরা আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি সূক্ষ্ম যোগাযোগব্যবস্থার মাধ্যমে কথা বলে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে কণ্ঠস্বরকে একত্র করে নতুন অর্থ তৈরি করতে পারে শিম্পাঞ্জিরা। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় শিম্পাঞ্জির যোগাযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। শিম্পাঞ্জিরা যোগাযোগব্যবস্থা মানুষের ভাষার কিছু মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা আইভরি কোস্টে বসবাসকারী শিম্পাঞ্জির তিনটি দলের রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে ভাষার বৈচিত্র্য পরীক্ষা করছেন। শিম্পাঞ্জিরা ঘড়ঘড় করে ও নিজেদের ডাককে একত্র করে মনের ভাব প্রকাশ করে। মানুষের মতোই নতুন বাক্যাংশ তৈরি করতে বা শব্দের ক্রম পরিবর্তন করতে পারে।
গবেষণায় প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা একটি যোগাযোগব্যবস্থার জটিলতা নথিভুক্ত করেছেন। তাঁরা মনে করছেন, শিম্পাঞ্জির ক্ষমতা প্রাথমিক পর্যায়ের প্রাণী যোগাযোগ ও মানুষের ভাষার মধ্যে একটি বিবর্তনীয় রূপান্তরকে প্রতিনিধিত্ব করে। বিজ্ঞানী ক্যাথেরিন ক্রকফোর্ড বলেন, ‘শব্দ একত্র করে নতুন বা সম্মিলিত অর্থ তৈরি করা মানুষের ভাষার একটি বৈশিষ্ট্য। আমাদের নিকটতম জীবিত আত্মীয় শিম্পাঞ্জি ও বোনোবোদের মধ্যে একই রকম ক্ষমতা আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছি আমি। অন্য একটি পৃথক গবেষণায় একই রকম প্রমাণ পাওয়া যায়। বোনোবোস নামের আরেকটি প্রাইমেট তাদের ডাক একত্র করে ডাক পরিবর্তন করতে ও বাক্যাংশ তৈরি করতে পারে।’
ভাষা নিয়ে এসব গবেষণা উভয় প্রজাতিই মানবভাষার মৌলিক গঠনমূলক উপাদান তৈরি করতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিবর্তনের ইতিহাসে বোনোবোস ও শিম্পাঞ্জি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রজাতির একটি। এসব প্রাণীর ভাষা বিশ্লেষণ করে মানবভাষা কীভাবে বিকশিত হয়েছিল তা জানতে চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী সেড্রিক গিরার্ড-বাটোজ বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে এসব প্রাণীর মধ্যে কণ্ঠস্বরনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ভাষার জটিল সংমিশ্রণক্ষমতা অন্য প্রাণীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে।’
গবেষণার জন্য, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বনের নির্দিষ্ট প্রাণীদের অনুসরণ করেন করেন বিজ্ঞানীরা। শিম্পাঞ্জিদের কণ্ঠস্বরব্যবস্থার জটিলতা জানতে ভিডিও ধারণ করা হয়। ৫৩টি বন্য শিম্পাঞ্জির ৪৩০০টির বেশি কণ্ঠস্বর রেকর্ড করেছেন তাঁরা। শিম্পাঞ্জিদের কণ্ঠস্বর ধারণের সময় গবেষকেরা তাঁদের কার্যকলাপ, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ও পরিবেশগত পরিবর্তন ট্র্যাক করেছেন। গবেষকেরা দেখেছেন, শিম্পাঞ্জিরা তাদের জীবনের সব দৈনন্দিন ডাক একত্র করতে পারে। ডাকের সমন্বয়ে বিভিন্ন ধরনের অর্থ প্রকাশ করতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ