বরিশালে মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য আবাসিক হোটেলে নিয়ে এক নারীকে (৪২) ধর্ষণের অভিযোগে উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বরিশাল মহানগরের স্টিমারঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ।
গ্রেপ্তার আবুল বাশার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিহারীপুর এলাকার বাসিন্দা এবং মামলা দায়েরকারি ও ভুক্তভোগী বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানাধীন কাশিপুরের ইছাকাঠি এলাকার বাসিন্দা।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম বলেন, উপ পরিদর্শক আবুল বাশারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন এক নারী। এই ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওই নারী গতকাল শনিবার সকালে কোতোয়ালি মডেল থানায় এসআই আবুল বাশারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। দুপুরে গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তসহ এসআই আবুল বাশারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগকারী নারী বর্তমানে বরিশালের একটি হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে আছেন। তার মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি বরিশাল মহানগর এলাকার বাসিন্দা।
এসআই আবুল বাশারের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিহারিপুর গ্রামে। এর আগে বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় এক সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। এদিকে স্টিমার ঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ আবুল বাশারের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় চাঁদাবাজীর অভিযোগ ছিল এলাকাবাসীর।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ৫ অক্টোবর এসআই আবুল বাশারের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই নারীর। এরপর তারা একে অপরের মুঠোফোন নম্বর নেন। ১৩ অক্টোবর একটি মামলার বিষয়ে এসআই আবুল বাশারকে ফোন করেন ওই নারী। ওই সময় তাঁর অবস্থান জানতে চান আবুল বাশার। বাদী অবস্থান জানালে সেখানে যান তিনি।
একপর্যায়ে একটি মামলার বিষয়ে কথা আছে বলে ওই নারীকে কৌশলে নগরের প্যারারা সড়কের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান আবুল বাশার। ওই হোটেলের ২০৪ নম্বর কক্ষে নেওয়ার পর তিনি তাকে ধর্ষণ করেন।
বিকেল পাঁচটার দিকে হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে যান ওই নারী। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় মামলা করতে এক দিন দেরি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।
কেন অপরাধে জড়াচ্ছে পুলিশ?
সূত্র মতে, পুলিশের ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়ানোর হার বাড়ছে। অন্যান্য অভিযোগেও জড়িত আছে পুলিশ বিভাগ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশ থেকে প্রতি বছর ২০-২৫ হাজার পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ জমা পড়ে।
পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসে তার মধ্যে খুন, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, ছিনতাই, নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী চাকরিচ্যুত, ফৌজদারি মামলা, গুরু ও লঘু দণ্ড প্রদান করা হচ্ছে।
পুলিশদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে এটা বলব না। যে অনিয়মগুলো হয় সেগুলোর কোনো বিচার হয় না। বড়জোর ডিপার্টমেন্টাল কিছু অ্যাকশন হয়। যে কারণে এটি বিকশিত হতে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এখন বেরিয়ে আসছে একের পর এক ঘটনা। এটি খুবই উদ্বেগজনক। গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য এটি সহায়ক নয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, যারা অপরাধে জড়ান তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা যতটুকু আছে সেটিও হারাবে। সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পুলিশের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও দীর্ঘদিনের। সরকার পুলিশকে নিজস্ব কাজে ব্যবহার করছে।
এ কারণে তারা তাদের পেশাগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। সাম্প্রতিক পুলিশের এমন অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বাকিরা যাতে আইন মেনে চলেন, তার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ভালো কাজে পুরস্কার এবং খারাপ কাজ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারির দুর্বলতাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। শুধু নজরদারি বাড়ানো নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারলে অনেকাংশে কমানো সম্ভব পুলিশ সদস্যদের অপরাধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, নতুন করে পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এটা বলবো না। অপরাধ প্রবণতা সব প্রফেশনেই আছে, পুলিশেও আছে। এটা একটা পাওয়ার ফুল জব, তাই হয়তো আলোচনায় বেশি আসে।
শাস্তি না হওয়াতেই কি পুলিশের এমন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দুই বছরে পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তবে এই বিষয়গুলো সেভাবে গণমাধ্যমে আসে না বলেই হয়তো এমন হচ্ছে। ফলে বিষয়টি সামনে আসে না। শাস্তি না হবার আরেকটা কারণ উল্লেখ করে ফারজানা রহমান বলেন, পুলিশকে অনেক বেশি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে তারা অনেক সময় অপরাধ করলেও তাদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এসএস/০৭৩৩
আপনার মতামত জানানঃ