পশ্চিম তীরের জেনিনে ১১ মে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আল–জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ৫১ বছর বয়সী এ সাংবাদিক ঘটনার দিন সুরক্ষিত পোশাক পরে ছিলেন। তাঁর পোশাকে প্রেস লেখা ছিল। অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শিরিন। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার গায়ে লাগে, মারা যান শিরিন। সেই ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক বহুবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ফরেনসিক আর্কিটেকচার এবং ফিলিস্তিনি অধিকার গোষ্ঠী আল হক।
যৌথ তদন্ত প্রতিবেদনে আল জাজিরার সিনিয়র সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে ‘জেনেবুঝেই’ খুন করার তথ্য উঠে এসেছে।
পশ্চিম তীরের শহর জেনিনে ১১ মে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের খবর সংগ্রহের সময় গুলিতে নিহত হন ৫১ বছরের শিরিন। প্রত্যক্ষদর্শী এবং তার সহকর্মীরা দাবি করে আসছেন, ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।
তবে শুরু থেকেই এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইসরায়েল। তেল আবিবের দাবি, শিরিনের গায়ে গুলি ভুলক্রমে লেগেছে।
শিরিন আবু আকলেহ ২৫ বছর ধরে আল জাজিরার হয়ে কাজ করছিলেন। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদে সরব ছিলেন তিনি। এ কারণে তিনি ‘ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর’ নামেও পরিচিত ছিলেন।
যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, স্নাইপার তিন দফায় গুলি চালায় শিরিনকে লক্ষ্য করে। প্রথমবার ৬টি, আট সেকেন্ড পর আরও ৭টি। এই ১৩টি গুলির একটি শিরিনের হেলমেটের ঠিক নিচে আঘাত হানে। দুই মিনিট পর, তাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা বন্ধ করতে আরও ৩টি গুলি ছোড়ে স্নাইপার।
স্নাইপার তিন দফায় গুলি চালায় শিরিনকে লক্ষ্য করে। প্রথমবার ৬টি, আট সেকেন্ড পর আরও ৭টি। এই ১৩টি গুলির একটি শিরিনের হেলমেটের ঠিক নিচে আঘাত হানে। দুই মিনিট পর, তাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা বন্ধ করতে আরও ৩টি গুলি ছোড়ে স্নাইপার।
এ ছাড়া ঘটনার পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ওই এলাকায় সাংবাদিক ছিলেন, এটা স্নাইপার জানতেন। এ সময় জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনী এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কাও নাকচ করে দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েল জানায়, শিরিনকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে তারা অপরাধমূলক তদন্ত শুরু করবে না।
সাংবাদিক শিরিনের হত্যাকাণ্ড গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এমনকি তার কফিন বহন করা ফিলিস্তিনিদের ওপরেই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববাসী। ইসরায়েলের এমন হিংস্র আচরণের কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বিভিন্ন দেশের প্রধানরা। দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান তারা।
ফিলিস্তিনের তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ২০০০ সাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৪৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তবে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের তথ্যানুসারে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। তারা বলছে, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৫৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট ১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভুখন্ডে ১৭ জন সাংবাদিক নিহত হওয়ার নিশ্চিত ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে ১৫ জন সাংবাদিক সরাসরি ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন।
২০১৯ সালে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল কমিশনের রিপোর্ট বলছে, সাংবাদিকদের পরিকল্পিতভাবে গুলি করে ইসরায়েলি স্নাইপাররা। কারণ এ সব সাংবাদিকদের শরীরে থাকা জ্যাকেটে পরিষ্কার করে প্রেস শব্দ লেখা ছিল। তবে এই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট ও বিকৃত দাবি করে নাকচ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
রিপোর্টার্স উইথাউট বর্ডার্স বলছে, শুধু টার্গেট কিলিংই নয়, ২০১৮ সালের গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন প্রটেস্টসের পর থেকে ইসরায়েলি রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ১৪৪ সাংবাদিক। গেল বছর পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহতে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি ও আরব-ইসরায়েলিদের ঘর দখল ইস্যুতে প্রতিবাদের খবর সংগ্রহের সময় আল-জাজিরার সাংবাদিক গিভারা বুদেরিকে টেনে-হিচড়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার পর তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় দেশটি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৩
আপনার মতামত জানানঃ