মিয়ানমারে একটি স্কুল ও গ্রামে হামলা চালিয়ে সাত শিশুসহ অন্তত ১১ শিশুকে হত্যা করেছে করেছে দেশটির জান্তা সরকার। খবর ইরাবতী
গত শুক্রবার তাবায়িনে জান্তার বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে এ প্রাণহানি ঘটে। একে শিশু হত্যা বলে অভিহিত করেছে প্রতিরোধ বাহিনী। তবে জান্তা বলছে, তারা তাবায়িনে বিদ্রোহীদের হামলার জবাব দিয়েছে।
গত শুক্রবার তাবায়িনের লেত ইয়েত কোনে গ্রামের একটি সন্ন্যাসী স্কুলে দুটি এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালায় জান্তা। হামলায় ঘটনাস্থলে সাত শিশু নিহত হয়। আহত হন ৩ শিক্ষক ও ১৪ শিশু।
পরে জান্তার স্থলসেনারা গ্রামটিতে অভিযান চালান। এ অভিযানে আরও দুই শিশু নিহত হয়।
বিমান হামলায় নিহত সাত শিশুর লাশ নিয়ে যান জান্তা সেনা। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়।
গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহী এবং তাদের সহযোগীদের ওপর সামরিক সরকারের হামলায় মিয়ানমারে প্রায়ই বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে সাগাইং অঞ্চলের তাবায়িন শহরে গত শুক্রবারের (১৬ সেপ্টেম্বর) হেলিকপ্টার হামলায় নিহত শিশুর সংখ্যা সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
স্কুলের প্রশাসক মার মার বলেছেন, আক্রমণের সময় তিনি ছাত্রদের নিচতলার ক্লাসরুমে নিরাপদে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। সেসময় গ্রামের উত্তরদিকে ঘোরাফেরা করা চারটি এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার মেশিনগান এবং ভারী অস্ত্রের সাহায্যে গ্রামের বৌদ্ধবিহার প্রাঙ্গণের দু’টি স্কুলে হামলা চালাতে শুরু করে।
তিনি বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই বিমানটি গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি বিষয়টিকে কোনো সমস্যা মনে করেননি।
‘যেহেতু ছাত্ররা কোনো ভুল করেনি, আমি কখনই ভাবিনি যে তাদের মেশিনগান দিয়ে নির্মমভাবে গুলি করা হবে।’
সোমবার ফোনে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে মার মার বলেন, ‘যেহেতু ছাত্ররা কোনো ভুল করেনি, আমি কখনই ভাবিনি যে তাদের মেশিনগান দিয়ে নির্মমভাবে গুলি করা হবে।’
মার মার আরও বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শিশুদের হত্যার বিচার চাই। মানবিক সাহায্যের পরিবর্তে, আমাদের প্রকৃতপক্ষে যা প্রয়োজন তা হল প্রকৃত গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার ‘
‘মিয়ানমার নাউ’ নামের একটি অনলাইন নিউজ সার্ভিস এবং অন্যান্য স্বাধীন মিয়ানমার গণমাধ্যমও হামলা এবং ছাত্রদের এ মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে।
জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)। পিডিএফের নেতা বো কিয়ার গি বলেন, ‘তারা (জান্তা) যদি আমাদের কাউকে মারত, তাহলে তা মেনে নিতাম। কারণ, আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কিন্তু তারা স্কুলের শিশুদের হত্যা করেছে। এটি অগ্রহণযোগ্য।’
জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটি গত জুন মাসে বলেছে, দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে স্কুল ও শিক্ষা কর্মীদের ওপর ২৬০টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত ও ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা জারি রয়েছে।এই ঘটনার পর দেশটিতে তীব্র গণ-আন্দোলন শুরু হয় এবং সামরিক ক্ষমতার জোরেই বার্মিজ সেনাবাহিনী তা দমনের চেষ্টা করে। এতে নিহত হচ্ছে শিশু নারীসহ অনেক বেসামরিক মানুষ।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় অং সান সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। সেনা প্রধান মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন।
কিন্তু অভ্যুত্থানের পরপরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী জনগণ। রাজধানী নেইপিদো, বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়সহ ছোট বড় বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভ দমনে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথম দিকে লাঠিচার্য, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, জল কামান ব্যবহার করলেও পরে জান্তার নির্দেশে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে ইতোমধ্যে দেশটিতে প্রায় ১৫ শ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৬
আপনার মতামত জানানঃ