জসিম মুহাম্মদ রুশনী
যখন চারদিক থেকে হাজার কণ্ঠ চিৎকার করে বলছে “উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ”, তখন সেই চিৎকারের নেপথ্য থেকে ভেসে আসছে ত্যাক্তবিরক্ত ভুক্তভোগীদের আহাজারি। অন্যদিকে উন্নয়নযজ্ঞের দায়িত্বশীল পুরোহিতরা আবিষ্কার করছে দু’হাতে লুটে নেবার নতুন নতুন মন্ত্রোপাচার। দিন থেকে সপ্তাহ, সপ্তাহ থেকে মাস, সেই মাস থেকে বছর বছর প্রলম্বিত করা হচ্ছে উন্নয়নের তথাকথিত মেগা প্রজেক্ট।
বাঙলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম। এখানেই রয়েছে দেশীয় অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। সেই সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বৈশ্বিক যোগাযোগের অবকাঠামো। সেই অবকাঠামোর অন্যতমটি হলো শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দর থেকে শহরের মূল পয়েন্টের দূরত্ব বিশ কিলোমিটার। এই বিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতেই লেগে যায় কয়েকটি ঘন্টা। যার কারণে অনেক যাত্রী ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার না করে সড়কপথকেই বেছে নেয় যাতায়াতের জন্য। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের ক্ষেত্রে মানুষ বেছে নেয় সড়ক পথকে।
বিমানবন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনীহার মূল কারণটা ছিলো অসহনীয় যানজট। বন্দরকেন্দ্রিক যাবতীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দর সড়কেই অবস্থিত। তাই এই এলাকায় যানজট রাতদিন সমানেই থাকে। সবগুলো দিক বিবেচনা করে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার স্বার্থে ২০১৭ সালে একনেক একটি মেগা প্রজেক্ট অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির নাম চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। খরচ ধরা হয়েছিলো ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিলো ৩ বছর।
পাঁচ বছর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা পরিবর্তনের কথা এলেও মূল নকশায় কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি।
একনেক অনুমোদিত ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০১৮ সালে দৃশ্যমান হয়। চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে (আক্তারুজ্জামান ফ্লাইওভারের এন্ডিং পয়েন্ট) বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রস্তাবিত উড়াল সড়কটির কাজ শুরু, হিসাব মতে ২০২১ সালের শেষ দিকে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু হয়নি, এই পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের বর্ণিত ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পরেও সৃষ্টি হয়েছে নতুন জটিলতা। পরিবর্তন করতে হচ্ছে নকশা। খরচ বেড়ে যাচ্ছে মূল বাজেটের ৩২ শতাংশ। কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পাঁচ বছর পর কেন নকশা পরিবর্তন? এর উত্তর খুঁজতে হলে আরেকটু সময় নিতে হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বিডি নিউজকে জানিয়েছেন -“পাঁচ বছর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা পরিবর্তনের কথা এলেও মূল নকশায় কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি।” মূল নকশায় ত্রুটি ধরা না পড়ার পরও নকশায় কেন পরিবর্তন আনতে হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন -“এই আকস্মিক জটিলতা আমাকেও বিস্মিত করেছে। আমি এনিয়ে আর কিছু বলতে পারবো না।”
চউকের প্রধান প্রকৌশলী তথ্য সরবরাহে অপারগতা জানালেও সংবাদকর্মীরা বসে থাকেননি, তাঁরা উদঘাটনের চেষ্টা করেছেন হঠাৎ নকশা পরিবর্তনের রহস্য। জানা গেছে ইতিপূর্বে প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী চউক নির্মাণ কাজের সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে। সে আবেদনে ব্যয়বৃদ্ধির কথা উল্লেখ ছিলো না। কিন্তু সেই বর্ধিত সময়ের শেষ প্রান্তে এসে আবারও সময় বাড়ানো, নকশায় পরিবর্তন এবং ৩২ শতাংশ ব্যয়বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন – এটিই চট্টগ্রামের জন্য সর্ববৃহৎ প্রকল্প। প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে আক্ষরিক অর্থেই পাল্টে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। এবং সেই আশাতেই ২০১৮ সালের জুন মাস হতে নগরবাসী দুর্ভোগ মেনে নিয়েছে। কিন্তু কেউ জানতো না যে দুর্ভোগের প্রহর এতো দীর্ঘতর হবে। নকশা পরিবর্তনের সাথে ব্যয়বৃদ্ধি ও সময়বৃদ্ধির বিষয়টা যুক্ত হওয়ায় নাগরিকজীবনে নেমে এসেছে ক্ষোভ ও হতাশা। এর শেষ কোথায়? বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আমাদের পোর্টালে। যথাশীঘ্র এনিয়ে সবিস্তারে আলোকপাত থাকবে আগামীতে।
আপনার মতামত জানানঃ