আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থসংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। সে চিঠির প্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কী উদ্যোগ নেন, কী জবাব দেন, তার অপেক্ষা না করেই এ নিয়ে বাহাসে নেমে পড়েছেন এক নির্বাচন কমিশনার। ওই কমিশনার বিশিষ্ট নাগরিকদের চিঠিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই নির্বাচন কমিশনার হলেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
২০ ডিসেম্বর ২০২০ গতকাল রবিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এটা হয়তোবা কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এগুলোর কোনোটার ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। এরকম একটা বিষয় উপস্থাপন করা সুধীজনের জন্য বিবেচনা প্রসূত নয়।’
ইসি শাহাদাত বলেন, ‘আমার বিবেচনায় চিঠি পাঠানো এই বিশিষ্টজনদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয় তারা নির্বাচন কমিশনে ব্যবসা করতে চেয়েছেন। সেই ব্যবসার সুযোগ হয়তো এই ইসির আমলে হয়নি। ক্ষুব্ধ হতেই পারেন।’ চিঠির বিষয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ করতে চান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ সাংবিধানিক পদে থেকে কোনো চ্যালেঞ্জ করতে চাই না। তারা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন। এখন রাষ্ট্রপতি বিষয়টি দেখবেন।’
কী উদ্দেশ্যে বিশিষ্টজনরা এটা করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কী উদ্দেশ্যে তারা এ কাজ করেছেন, সেটা তারাই বলতে পারবেন।’
অভিযোগগুলোর বিষয়ে নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরে কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বিশিষ্টজনরা যে এ ধরনের কথা বলছেন, দু-একটা পত্রিকা বা টেলিভিশনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই তারা এ ধরনের একটা অভিযোগ করেছেন। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ ও গাড়ি ব্যবহারের বিষয়টা যে পত্রিকা ছাপিয়েছিল, সেখানে আমরা রিজয়েন্ডার দিয়েছিলাম। আমরা জানি না, সেটা তাদের নজরে এসেছে কি না।
দ্বিতীয়ত, গাড়ির যে ব্যবহারের বিষয়, আমার মনে হয় না আমাদের সেই প্রয়োজন আছে। কারণ, আমাদের প্রাধিকারভুক্ত গাড়ি সেটাই আমরা শপথ নেওয়ার তিন বছর পর পেয়েছি। তারা যে গাড়িগুলো অত্যন্ত বিলাসবহুল হিসেবে বলেছেন, আমরা জানি না বিলাসবহুল ছাড়া অন্য গাড়ি কোনগুলো। আমি তো দেখেছি, সেগুলো ইউএনওরাও ব্যবহার করছেন। বাড়তি গাড়ি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা আমার নেই, আমার বিশ্বাস অন্যদেরও নেই।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে তারা অভিযোগ স্থাপন করলেন, আবার আমাদেরও অভিযুক্ত করে ফেললেন। শুধু সেটা না, আমাদের কী করণীয় বা আমাদের কী দণ্ড সেটাও এক অর্থে দিয়ে দিলেন। সেটা কতখানি বিবেচনাপ্রসূত বা শিষ্টাচার বর্জিত কি না, সেটা বিবেচনার ভার আপনাদের।’
মানহানির বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাবেন কি না, এমন প্রশ্নে এই কমিশনার কিছু জানাতে রাজি হননি। আরেক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট চেষ্টা করছে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য। নির্বাচন কমিশনের যতটুকু করণীয় তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’
প্রসঙ্গত, ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে বিশিষ্টজনদের ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে গত শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ৪২ জন নাগরিকের পক্ষে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। চিঠিতে সাংবিধানিক এই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বরাবর দেওয়া আবেদনে ইসির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে, তা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্নভাবে গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত হয়েছেন। কমিশনের সদস্যরা একদিকে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যা অভিশংসনযোগ্য অপরাধ। একইভাবে তারা বিভিন্নভাবে আইন ও বিধিবিধানের লঙ্ঘন করে গুরুতর অসদাচরণ করে চলেছেন।
এসডাব্লিউ/ডিআর/আরা/১১৩০
আপনার মতামত জানানঃ