ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ ইয়েমেনে অপহরণ হয়েছেন জাতিসংঘে কর্মরত বাংলাদেশি ওই নাগরিক। অনলাইনে জিহাদি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স বলছে, ইয়েমেনে অপহৃত বাংলাদেশি জাতিসংঘ কর্মীর একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা।
ভিডিওতে অপহৃত এ কে এম সুফিউল আনাম তাকে উদ্ধারের জন্য জাতিসংঘের কাছে আকুতি জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ভিডিওটি নিরপেক্ষ কোন সূত্র থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ কে এম সুফিউল আনাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি কুড়ি বছর ধরে জাতিসংঘের সাথে কর্মরত আছেন। অপহরণের সময় তিনি ইয়েমেনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছিলেন।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ জাতিসংঘের একটি ফিল্ড মিশন শেষে অ্যাডেনে ফিরে আসছিলেন আনামসহ পাঁচজন জাতিসংঘ কর্মী। সেদিন গাড়ির চালককে ছেড়ে দিয়ে আনামসহ ওই পাঁচজনকে ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা।
পরে জানা যায় এই অপহরণের সাথে ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদা জড়িত। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেসময় সেরকমটাই লেখা হয়েছিল। এই ঘটনা যখন ঘটেছে তার কিছুদিনের মধ্যেই অবসরে যাওয়ার কথা ছিল আনামের।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের কোন একজন নেতার নিকটাত্মীয়। তবে এর বেশি তথ্য তিনি দেননি।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, এ কে এম সুফিউল আনামকে উদ্ধারে বাংলাদেশ এতদিন যেভাবে কাজ করে আসছিল এখন ভিন্নভাবে এগুনোর চিন্তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, বিষয়টি জানার সাথে সাথেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং শুরু থেকে জাতিসংঘের সাথেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করে আসছিল।
“তারা আমাদের বারবার আশ্বস্ত করেছেন যে তারা যোগাযোগ করছেন, অগ্রগতি আছে। কিন্তু আমরা নিজেরা যেন কিছু না করি এমন পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, বিষয়টির স্পর্শকাতরতা বিচার করে এবং তার জন্য কোন কিছু যেন প্রাণনাশের কারণ হয়ে না দাড়ায় সেজন্য।”
“রেবেল গ্রুপের অপহরণগুলি খুব স্পর্শকাতর হয়। আপনি কার সাথে নেগোসিয়েশন (দরকষাকষি) করছেন অনেক সময় সেটা জানেন না। কোনও ভুল পথে গেলে তার জীবনের জন্য সেটা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এই সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা এতদিন জাতিসংঘের অনুরোধ রেখে কাজ করেছি।”
কিন্তু নতুন অগ্রগতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এখন নিজেই উদ্যোগী হয়ে ভিন্ন কৌশলে এগুনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি জানান।
“এতদিন পর্যন্ত শুধু জাতিসংঘকেই চাপ দিয়ে আসছিলাম আমরা। জাতিসংঘ তার নিয়োগদাতা হওয়ার কারণে অদ্যাবধি আমরা তাদের কথা শুনছি। কিন্তু এখন আমরা যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, ইয়েমেনে বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব রাষ্ট্র যুক্ত ছিল, কিছুদিন আগে সেখানে একটা যুদ্ধবিরতি হয়েছে, এই যুদ্ধবিরতিতে যারা সহায়তা করেছে আমরা সেইসব দেশের সাথে যোগাযোগ করছি যে তারা আমাদের কিভাবে সহায়তা করতে পারে। কারণ জাতিসংঘের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়।”
দেশগুলোর নাম উল্লেখ করতে রাজি হননি শাহরিয়ার আলম। তিনি জানিয়েছেন, অপহরণকারীরা একটি বড় অংকের মুক্তিপণ দাবি করেছে। তবে সেটি কত অংকের সেটিও জানাননি তিনি।
“এটা একটা এথিকাল (নৈতিক) বিষয়। জাতিসংঘ কখনোই তার নীতিগত অবস্থান থেকে এটা (মুক্তিপণ) দিতে পারে না। আমি বলছি না আমরাও দেবো। তবে নেগোসিয়েশনে অন্য কোন মেকানিজম ব্যাবহার করা যায় কি না, যাতে আমরা তাদের সাথে আলাপ করতে পারি, আমরা এখন জাতিসংঘের পাশাপাশি নতুনভাবে নিজেরাই বিষয়টা দেখবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
গত ছয়মাসে জাতিসংঘের বৈঠকে যাওয়ার সুবাদে তিনি নিজে এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি একাধিকবার তুলেছেন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিয় গুতেরেজকেও সাহায্যের অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহরিয়ার আলম।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর দপ্তর, মি আনাম যে দপ্তরের কর্মকর্তা তাদের কাছেও বিষয়টি নিয়ে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এব্যাপারে জাতিসংঘের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ