পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ও তারারা ঘুরে বেড়ায় বিশাল এই ব্রহ্মাণ্ড, এক সময় মানুষ এটাই বিশ্বাস করতো। এ ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস। পরবর্তীতে গ্যালিলিও গ্যালিলি এর ভালো প্রমাণ দেন। বৃহস্পতি গ্রহের সবচেয়ে বড় চারটি চাঁদ পর্যবেক্ষণ করে তিনি তার সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। এ প্রমাণ বদলে দেয় মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের চিন্তাধারা। স্বাভাবিকভাবে সে ইতিহাসের অংশ হয়ে যায় বৃহস্পতি।
বৃহস্পতি গ্রহ ইংরেজিতে যেটি জুপিটার্ (Jupiter) নামে পরিচিত। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে পঞ্চম গ্রহ হলেও আকার আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি। বৃহস্পতি ছাড়া যদি সৌর জগতের বাকি সবগুলো গ্রহের ভরকে একত্রিত করা হয় তবে বৃহস্পতির ভর তা থেকে আড়াই গুণ বেশি। এই গ্রহের চোখধাঁধানো ছবি সামনে এনেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। যেমনটা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
সেই ছবি সোমবার প্রকাশ করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি এ টেলিস্কোপে তোলা বৃহস্পতি গ্রহের বেশ কিছু ছবি উন্মুক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। ওই ছবিতে বৃহস্পতি গ্রহটির অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেছে।
গবেষকেরা বলেন, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ গত জুলাই মাসে বৃহস্পতি গ্রহের অভূতপূর্ব দৃশ্য ধারণ করে। এ ছবিতে গ্রহটির মেরুপ্রভা (নর্দান ও সাউদার্ন লাইটস) ও ঘূর্ণমান মেরু কুয়াশা দৃষ্টিগোচর হয়। এর বাইরে গ্রহটির ছোট–বড় অনেক ঝড়ের দৃশ্যের পাশাপাশি পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলার মতো বৃহস্পতির বিশাল লাল বিন্দু (গ্রেট রেড স্পট) স্পষ্টভাবে দেখা যায়। একটি ছবিতে বৃহস্পতির চারপাশে প্রায় বিবর্ণ একটি বলয়ের পাশাপাশি দুটি ক্ষুদ্র চাঁদও দৃষ্টিগোচর হয়।
পর্যবেক্ষণে সহায়তাকারী ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইমকে ডি প্যাটার বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতি গ্রহকে এভাবে আগে দেখিনি। এটা বেশ অবিশ্বাস্য। সত্যি বলতে, এটি এত ভালোভাবে দেখা যাবে, এটা আমরা আশা করিনি।’
বৃহস্পতির ছবি ফুটিয়ে তুলতে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের গবেষক দল ইনফ্রারেড ছবিকে কৃত্রিমভাবে নীল, সাদা, সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙে রাঙান।
হাবল স্পেস টেলিস্কোপটির উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি তৈরিতে ১০ বিলিয়ন মার্কন ডলার খরচ করে নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। গত বছরের শেষ দিকে এটি মহাকাশে কার্যক্রম শুরু করে। গত গ্রীষ্ম থেকেই ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ করছে টেলিস্কোপটি। এটি পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে অবস্থিত। গত মাসে নাসার বিজ্ঞানীরা এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পাওয়া ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের এক রঙিন ছবির বিষয়টি সামনে আনেন। এরপর আকাশগঙ্গা ছায়াপথের দূরতম স্থানে পৃথিবীসদৃশ একটি গ্রহে পানি থাকার চিহ্নও শনাক্ত করে হইচই ফেলে দেয় এ টেলিস্কোপ। এখন আবার বৃহস্পতির অভূতপূর্ব ছবি দিয়ে বিশ্ববাসীকে বিমোহিত করল এটি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১২৬
আপনার মতামত জানানঃ