পাহাড় সমান মামলার ভারে জর্জরিত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে উভয় বিভাগে (আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগ) ৫ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আপিল বিভাগে ১৫ হাজার ৪৬০ ও হাই কোর্ট বিভাগে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬২টি মামলা বিচারাধীন। তবে এ পাহাড়সম মামলার জট দূর করতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে কাজ করছেন মাত্র ৯৯ জন বিচারপতি। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগে সাতজন ও হাই কোর্ট বিভাগে ৯২ জন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগের তুলনায় উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে, কিন্তু জট কমেনি। উভয় বিভাগে দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তির সংখ্যা বেশি। কিন্তু মামলাজট কমছে না।
জানা গেছে, বিচার বিভাগ পৃথক্করণের সময় উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ১৩ হাজার। ওই সময় উভয় বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ছিল ৮১ জন। বর্তমানে উভয় বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ৯৯ জন। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতে আরও বিচারপতি বাড়ানোর মত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
আইনজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে বিচারপতির সংখ্যা অনেক কম। তাই উচ্চ আদালতে মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তিতে আরও অধিকসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
উচ্চ আদালতে মামলাজট নিরসনে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক ২৭ দফা সুপারিশও দিয়েছিলেন। তার মতে, উচ্চ আদালতে যত-সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে, পাশাপাশি দায়েরের সংখ্যা কমছে না। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতে আরও বিচারক নিয়োগের পরামর্শ দেয় আইন কমিশন।
ওই সময় উচ্চ আদালতে মামলাজট কমাতে আইন কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি মনিটরিং সেল স্থাপন এবং মামলা দাখিল ও নিষ্পত্তির সংখ্যা কী কী কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিরূপণ করা। এ ছাড়া কোনো দেওয়ানি, ফৌজদারি মোশন আবেদন বা সিআরপিসির ৫৬১(এ) ধারামতে আবেদন দাখিল করলে বিচারপতিরা প্রথমেই এর মেরিট যাচাই করবেন। মেরিটবিহীন আবেদন করা হলে অবশ্যই সরাসরি খারিজ করবেন।
সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত মামলাজট নিরসনে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের উচ্চ আদালতে মামলাজট না কমার অন্যতম কারণ বিচারপতির স্বল্পতা। অন্য দেশে মামলার তুলনায় আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বিচারপতি রয়েছে। তাই মামলাজট কমাতে হলে অবশ্যই আরও অধিকসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দেশে মামলার জট অস্বাভাবিক, এটিকে কমিয়ে আনতে হবে। আমরা চাই জনগণ বিচার পাক, বিচার প্রক্রিয়ায় মানুষের আস্থা টিকে থাকুক। এ জন্য আমাদের মামলার জট কমিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, মামলার জট নিরসন করা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম অগ্রাধিকার। আমরা পদ্ধতিগতভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছি।
বিচারাধীন মামলা কমানোর নানা উদ্যোগ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিচার ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে। বর্তমান সরকার এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ