১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ২২ বছরে বাংলাদেশে ৩৫ জন সাংবাদিকে হত্যা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র আটটি হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হলেও পাঁচটির রায় ভুক্তভোগীর পরিবার প্রত্যাখ্যান করেছে বলে এক প্রবন্ধে উঠে আসে। আর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন অসংখ্য।
এই যেমন এবার রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে এসপিএ ডায়গনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক হাসান মিসবাহ ও ক্যামেরা পারসন সাজু মিয়ার ওপর হামলা হয়েছে।
ডায়গনস্টিক সেন্টারটির মালিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এ সময় দুই সাংবাদিককে মারধর করেন। তাদের ক্যামেরা ভাংচুর করা হয় এবং ছিনিয়ে নেয়া হয় মোবাইল ফোন ও গাড়ির কাগজপত্র।
শুধু তাই নয়, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাদেরকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসেও ওই দুই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়।
আহত সাংবাদিক হাসান মিসবাহ বলেন, ‘ওই হাসপাতালে একজন ভুয়া চিকিৎসক বসেন। তিনি অন্য একজন চিকিৎসকের বিএমডিসি নম্বর ব্যবহার করে ওই হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে বসে আছেন।
‘ওই হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডাক্তার ওসমানীকে এই ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ক্ষেপে যান। তখন আমি বলি- আপনি এই হাসপাতালের মালিক ও একজন ডাক্তার। আপনার নামের পাশেও বিএমডিসি নম্বর লেখা নেই। এটা লেখা থাকলে ভাল হয়।’
হাসান মিসবাহ বলেন, ‘কথোপকথনের এই ডাক্তার ওসমানী বলে ওঠেন- তুই কি আমাকে ভুয়া ডাক্তার মনে করছিস? তুই জানিস আমি কে? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি। এই তোকে ইন্টারভিউ দেব না।
‘এ পর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার চশমা ভেঙে ফেলেন। আমরা বের হয়ে গাড়িতে আসার পর উনি সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। ড্রাইভারের কাছ থেকে মোবাইল গাড়ির কাগজ নিয়ে নেয়। এরপর তিনি আমার মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। আমাকে ও ক্যামেরা পারসন সাজু ভাই এবং ড্রাইভারকে ১৫-২০ জন মিলে মারধর করে। পরে আমাদেরকে একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখে।’
আহত এই সাংবাদিক আরও বলেন, ‘ওখানে কিছুক্ষণ পর দুজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের একজনের নাম মিলন হোসেন। তিনি পরিচয় জানতে চাইলে আমরা পরিচয় দেই। এরপর কার্ড চাইলে ক্যামেরা পারসন সাজু ভাই তার কার্ড বের করে দেন।
‘কার্ড হাতে নিয়ে পুলিশ সদস্য মিলন বললেন, তোরা ভূয়া সাংবাদিক। তখন আমি আবার আমার পরিচয় দেই এবং জানাই যে অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এখানে এসেছি। আপনি অফিসে ফোন দেন। উনি কোনো কথা না শুনে চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং আমার মুখে আঘাত করেন।’
এদিকে খবর পেয়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন। এ সময় দুইজনকে আটক করা হয়। এছাড়া সাংবাদিকদের মারধর করার দায়ে কামরাঙ্গরচর থানার এসআই মিলন হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাফর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় আমরা ইতোমধ্যে জড়িত দুজনকে আটক করেছি। এছাড়া সাংবাদিকের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য এসআই মিলনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
এসডব্লিউ/এসএস/১২০০
আপনার মতামত জানানঃ