ওসামা বিন লাদেনের পরিবারের কাছ থেকে ২০১৩ সালে ১ মিলিয়ন পাউন্ডের অনুদান গ্রহণ করেছিলেন প্রিন্স অফ ওয়েলস। খবর সানডে টাইমস এর। আল-কায়েদা নেতা নিহত হওয়ার দুই বছর পর প্রিন্স চার্লস ওসামা বিন লাদেনের দুই সৎ ভাইয়ের কাছ থেকে এ অর্থ গ্রহণ করেন।
প্রিন্স অফ ওয়েলসের চ্যারিটেবল ফান্ড (পিডব্লিউসিএফ) অনুদানটি পায়। বিবিসি-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ল্যারেন্স হাউসকে পিডব্লিউসিএফ জানিয়েছে যে যথাযথ নিয়ম মেনেই এই অনুদান গ্রহণ করা হয়েছে। ফান্ডের ট্রাস্টিরা এই অনুদান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন বলেও জানায় তারা।
গত মাসেই কাতারের ধনকুবের ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জসিম আল থানির কাছ থেকে চার্লসের দাতব্য সংস্থার জন্য স্যুটকেস ভরে নগদ ইউরো অনুদান নেওয়ার খবর নিয়ে বিতর্ক এবং তদন্ত চলার মধ্যে লাদেনের পরিবারের কাছ থেকেও তার অর্থ গ্রহণের খবর প্রকাশ পেল।
এই অনুদানকে ‘অন্যভাবে চিহ্নিত করার যে কোনো প্রচেষ্টাকে মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছে ক্ল্যারেন্স হাউস। এ বিষয়ে লন্ডনে প্রিন্স চার্লসের রাজকীয় বাসভবন ক্লারেন্স হাউজের পক্ষ থেকে বিবিসি-কে বলা হয়েছে, পিডব্লিউসিএফ থেকে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছিল, ‘যথাযথ নিয়মে যাচাই করার পরই’ সংস্থাটির ট্রাস্টিরা ওই অর্থ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৯৪ সালে নিজ পরিবার থেকে বিতাড়িত হন বিন লাদেন। তার কার্যকলাপের সাথে তার সৎ ভাইদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই।
সানডে টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাদেন পরিবারের প্রধান বকর বিন লাদেনের সাথে ক্ল্যারেন্স হাউসে এক বৈঠকের পর বকর ও তার ভাই শফিকের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেন প্রিন্স চার্লস।
সানডে টাইমস একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ক্ল্যারেন্স হাউস এবং পিডব্লিউসিএফ-এর উপদেষ্টাদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রিন্স চার্লস সে টাকা গ্রহণ করেন।
তবে পিডব্লিউসিএফ- এর চেয়ারম্যান স্যার ইয়ান চেশায়ার সংবাদপত্রকে বলেন, ২০১৩ সালে ‘সাবধানতার সাথে বিবেচনা করে’ সেই সিদ্ধান্ত নেন পাঁচ ট্রাস্টি।
সানডে টাইমসের খবরে বলা হয়, ওসামা বিন লাদেনের ভাই বকর বিন লাদেনের সঙ্গে ক্লারেন্স হাউজে একটি বৈঠকের পর প্রিন্স চার্লস সৌদি আরবের ধনী পরিবারটির কর্তা বকর এবং তার ভাই শফিকের কাছ থেকে ওই অনুদান গ্রহণ করেন।
‘ক্লারেন্স হাউজ এবং পিডব্লিউসিএফ-র উপদেষ্টাদের আপত্তির পরও প্রিন্স চার্লস ওই অর্থ নিয়েছিলেন’ বলেও বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়।
তবে পিডব্লিউসিএফ-র প্রধান ইয়ান চেশার সানডে টাইমস-কে বলেছেন, পাঁচজন ট্রাস্টি ‘সতর্কভাবে যাচাইয়ের’ পর ২০১৩ সালে অনুদান হিসেবে গ্রহণ করা ওই অর্থ নিতে একমত হন।
তিনি বলেন, ‘‘সরকারসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয় এবং সেগুলো যথা নিয়মে যাচাই করা হয়। ‘‘অনুদান গ্রহণের সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণরূপে ট্রাস্টিদের নেওয়া। তাই এটিকে অন্যভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা বিভ্রান্তিকর এবং ভুল।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকার শীর্ষে থাকা ওসামা বিন লাদেনকে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে সন্ত্রাসী হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এসব হামলায় প্রায় ৩ হাজার লোক নিহত হন; যার মধ্যে ৬৭ জন ছিলেন ব্রিটিশ।
২০১১ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হন লাদেন। পিডব্লিউসিএফ-এর একটি সূত্র বিবিসিকে বলে, “যদিও ‘লাদেন’ নামটির একটি খারাপ ইতিহাস রয়েছে, তবুও তার কর্মের প্রভাব পরিবারের বাকিদের ওপর পড়া উচিত নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা ২০১১ সালে পাকিস্তানে আত্মগোপনে থাকা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। ১৯৯৪ সালে ওসামার বিন লাদেনের পরিবার তাকে ত্যাজ্য করেছিল।তার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার সৎ ভাইদের জড়িত থাকার প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ