গ্রামে বড় কোনো অনুষ্ঠানে হলে যে ধরনের ডেকোরেশন প্রয়োজন হতো; তা মন থেকে এই দীঘির পাড়ে গিয়ে চাইলে, সকালে সেগুলো দীঘির পাড়ে উঠে থাকতো। এরপর অনুষ্ঠান শেষে আবার পুকুরের পাড়ে ফিরিয়ে দিতে হতো যথারীতি।
স্থানীয় প্রবীণ আহাম্মদ আলীর মুখেই শোনা গেল ওয়াদ্দা দীঘির গল্প। আনুমানিক ৯২১ বছর আগে খনন করা ঐতিহাসিক আদিত্য পালের দীঘি বর্তমান কালের সাক্ষী হয়ে ওয়াদ্দা দীঘি নামে পরিচিত রয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুরে আদিত্য পালের ওয়াদ্দা দীঘি হয়ে আজও বেঁচে আছে।
ইতিহাস বলছে, অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় রাজা ইন্দ্রপাল বর্তমান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ইন্দ্রপুর ও তার আশেপাশের এলাকা নিয়ে স্বাধীন রাজ্য গঠন করেন। ইন্দ্রপুরের কীর্তি তার ইন্দ্রপুরের দীঘি। তার ছেলে আতিদ্য পাল কোচ রাজাকে প্রতিহত করার জন্য শ্রীপুর মৌজার সর্বোত্তরে একটি সেনা ছাউনি তৈরি করে তার পাশে একটি বড় দীঘি খনন করেন। যার বর্তমান নাম ওয়াদ্দা দিঘি।
আদিত্য পালের দিঘি নামে পরিচিত ছিল এটি। যার বর্তমান প্রচলিত নাম ওয়াদ্দার দিঘি। তার ছেলে রাজা শ্রীপালের নাম অনুসারে শ্রীপুর মৌজার নামকরণ করা হয়। মৌজার নাম অনুসরণ করে শ্রীপুর উপজেলার নামকরণ করা হয়। অভিধানিক অর্থে শ্রী-অর্থ সৌর্ন্দয্য, পুর -অর্থ নগরী অর্থাৎ সৌন্দর্যের নগরী নামে শ্রীপুর পরিচিতি লাভ করে।
জানা যায়, ১৯৯০ সালে পুকুরের পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হয় গুচ্ছগ্রাম। আর দক্ষিণ পাশে রয়েছে বিশাল আকৃতির হিন্দুদের তৈরি বিশাল আকৃতির একটি মট সমাধিস্থল। পূর্বপাশে কেন্দ্রীয় পৌর ঈদগাহ মাঠ আর উত্তরে মাদরাসা। সব মিলিয়ে বিশেষ দিবসে ওয়াদ্দা দীঘি কেন্দ্রিক গড়ে উঠে পর্যটকদের মিলনমেলা। ১৯৬৩ সালে প্রয়াত কালো মণ্ডল সর্বপ্রথম এই দীঘির সংস্কার করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির দীঘিটিতে স্বচ্ছ পানি। পুকুরের চারপাশে রয়েছে বিশাল আকৃতির পাড়। পুকুরে পূর্বপাশে বিশাল ঈদগাহ মাঠ। পুকুরে দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক বছর আগে মট বা সমাধিস্থল। যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে প্রভাবশালী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সমাহিত করতো বলে রেওয়াজ রয়েছে। বর্তমানে পুকুরটিতে গুচ্ছ গ্রামের একটি সমবায় সমিতির মাধ্যমে মাছের চাষ হচ্ছে। পুকুরে রয়েছে দেশি বিদেশি প্রজাতির প্রচুর মাছ।
স্থানীয় প্রবীণ আহাম্মদ আলী বলেন, আদিত্য পালের দীঘি ইতিহাস বা লোককথা বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি। আমার বাবার মুখে শুনেছি, কোনো এক অনুষ্ঠান থেকে একটি বাটি চুরি হওয়ার পর থেকে পুকুর থেকে হাঁড়ি পাতিল দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রহমান হোসেন বলেন, আমার বাপ-দাদারা রাত হলে দল বেঁধে এই পুকুর পাড় দিয়ে চলাচল করতেন। কারণ রাত হলেই এই পুকুর থেকে ভয়ংকর শব্দ আসতো। পুকুরে পাড়ে ছিল ঝোপঝাড় আর পুকুরে মধ্যে ছিল লতাপাতা ভরা। সামান্য জায়গায় পানি দেখা যেত।
শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, এই পুকুর রক্ষায় পৌরসভার পক্ষ থেকে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পুকুরের পাড়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ। এই মাঠে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম ঈদের নামাজ আদায় করে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে পুকুর কেন্দ্রিক শত শত মানুষের সমাগম হয়। এটিকে পর্যটনকেন্দ্র করার বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক আদিত্য পালের দিঘী যা বর্তমানে ওয়াদ্দা দিঘী নামে পরিচিত। এই দিঘির রক্ষণাবেক্ষণে সব সময় কাজ করছে প্রশাসন। দিঘীর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কাজ করা হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০১০
আপনার মতামত জানানঃ