বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক দুজন মানুষ নিজেদের ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কের কোনো ঘটনা ধর্ষণ নয়। দুই প্রাপ্তবয়স্ক সঙ্গী শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেই পারেন। কোনোভাবে একে দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের মামলায় ফেলা যায় না।
শুক্রবার (৮ জুলাই) ভারতের কেরালার হাইকোর্ট একটি মামলায় এমনই রায় দিয়েছেন।
জানা গেছে, রাজ্যটিতে শুক্রবার (৮ জুলাই) একটি মামলার শুনানি ছিল। এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে তার প্রেমিকা অভিযোগ, দিনের পর দিন বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেছিলেন তিনি। কিন্তু সম্পর্ক বছর চারেক গড়ানোর পরে বিয়ে করতে অসম্মত হন ওই আইনজীবী। পেশায় ওই নারীও আইনজীবী। এই পরিস্থিতিতেই আদালতের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
বিচারপতি বেচু কুরিয়ান থমাস জামিন দিয়েছেন ওই অভিযুক্ত আইনজীবী নবনীত নাথকে। আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, যদি দু’জন নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনতা হয় ও পরে সেই সম্পর্ক বিয়েতে পরিণতি না পায় তাহলে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যাবে না।
সেই সঙ্গে আদালত আরও জানায়, একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে কখনোই ধর্ষণ বলা যায় না, যদি না তা একজনের অসম্মতিতে হয়ে থাকে অথবা বলপূর্বক কিংবা কোনো প্রতারণা করা হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে বিচারপতি পরিষ্কার করে দেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসকে তখনই ধর্ষণ বলা যাবে যখন এর সঙ্গে প্রতারণা জড়িয়ে থাকবে।
কেরালা হাইকোর্টের বিচারপতি বেচু কোরিয়ান টমাসের পর্যবেক্ষণ, ‘দুজন প্রাপ্তবয়স্ক সঙ্গী তাদের ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেই পারেন। কিন্তু পরে একে কোনোভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের মামলায় ফেলা যায় না। প্রতারণা বা মিথ্যা কোনো পরিচয় দিয়ে এই সম্পর্ক করলে সেটা অন্য কথা।’
যদি দু’জন নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনতা হয় ও পরে সেই সম্পর্ক বিয়েতে পরিণতি না পায় তাহলে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যাবে না।
বিচারপতি পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, ‘যদি বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করা হয় এবং পরে বিয়ে করতে অস্বীকার করা হয়, তাকেও ধর্ষণ বলা যায় না।’
জানা গিয়েছে, সহকর্মী আইনজীবীর সঙ্গে প্রায় চার বছর ধরে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল ওই ব্যক্তির। কিন্তু এরপর তিনি অন্য এক নারীকে বিয়ে করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। এই পরিস্থিতিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী নারী। এরপরই শুক্রবার এই রায় দিলো সেখানের হাই কোর্ট।
এর আগেও বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে শারীরিক সম্পর্ক সবসময় ধর্ষণ নয় বলে রায় দিয়েছেন দিল্লির হাইকোর্ট। একজন নারীর এমন মামলা খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট এ রায় দিয়েছিলেন।
ওই নারী তার মামলায় দাবি করেছিলেন, একজন পুরুষ তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ প্রতিশ্রুতিতে তাদের মধ্যে মাসের পর মাস শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। তিনি এটাকে ধর্ষণ বলে দাবি করেন। জবাবে আদালত ওই রায় দেন।
আদালত বলেছিলেন, একজন নারী যদি তার নিজের সম্মতিতে দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন, তাহলে এটাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে ধর্ষণ বলা যাবে না।
আদালত বলেন, বিয়ের কথা বলে শারীরিক সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে তখনই ধরা হবে ভিকটিম যদি সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মনে করেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিয়ের প্রতিশ্রুতি হয়তো যৌন সম্পর্ক স্থাপনে উভয়কে সম্মত করাতে পারে। যদিও একই রকম মনে নাও করতে পারেন সংশ্লিষ্ট যুবক বা যুবতী।
আরও বলেছিলেন, এমন ক্ষেত্রে ওই শারীরিক সম্পর্কে উভয়ের মত আছে বলে ধরে নেওয়া হলেও, ওই যুবতীর মত ছিল না বলে মনে করা হয়। এমন ঘটনাকে ধর্ষণ হিসেবে ধরা হতে পারে। তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার অধীনে এটা ধর্ষণের অপরাধ হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৩২
আপনার মতামত জানানঃ