লিবিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে তিন শিশুসহ ২২ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা সবাই মালির নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ এবং দেশটির সরকার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ডুবে যাওয়া নৌকাতে ৮৩ জন ছিল। এদের বেশিরভাগই মালির নাগরিক। তাদের বহনকারী নৌকাটি গত ২২ জুন থেকে আটকে পড়ে। মঙ্গলবার মালির পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, লিবিয়ার কোস্টগার্ডের সহায়তায় ৬১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ৯ দিন সাগরে আটকে থাকার পর শনিবার তাদের উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়।
আইওএমের মুখপাত্র সাফা মাসেলি জানান, ২২ জনের মৃত্যুর কারণ ডুবে যাওয়া এবং পানিশূন্যতা বলে জানিয়েছেন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা।
মাসেলি আরো জানান, বেঁচে যাওয়াদের স্বাস্থ্য খুবই দুর্বল এবং তাদের হাসপাতালে পাঠিয়েছে আইওএম।
তিনি বলেন, বাকি অভিবাসীদের লিবিয়ার আল-মায়া আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত ক্ষুধা, সংকট, দারিদ্র্য, সংঘাত ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা লোকদের ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টাকে বাড়াতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে। আর এরই মধ্যে সর্বশেষ বিপর্যয়ের ঘটনাটি সামনে এসেছে। যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্লেষকেরা কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবকেও একটি চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশি স্পেন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের শস্য রফতানি বিঘ্নিত হওয়ায় ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হওয়া বাড়তে পারে। আর এতে সাহিল এবং আফ্রিকার সাব-সাহারা এলাকা থেকে অভিবাসন সংকট তৈরি হতে পারে।
ইউক্রেনের শস্য রফতানি বিঘ্নিত হওয়ায় ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হওয়া বাড়তে পারে। আর এতে সাহিল এবং আফ্রিকার সাব-সাহারা এলাকা থেকে অভিবাসন সংকট তৈরি হতে পারে।
গত সপ্তাহে প্রায় দুই হাজার মানুষ উত্তর আফ্রিকায় স্পেনের ছিটমহল মেলিলায় প্রবেশের চেষ্টা করলে ২৩ জনের মৃত্যু হয়। মরক্কো এবং স্পেনের মানবাধিকার গ্রুপগুলো এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
২০১১ সালে সামরিক জোট ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহের পর থেকে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করা হয়। আর এরপর থেকেই আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে যুদ্ধ এবং দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসা লোকদের অভিবাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে লিবিয়া।
মূলত উন্নত জীবনের আশায় মরুভূমি এবং ভূমধ্যসাগর জুড়ে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করে অভিবাসীরা। কিন্তু সাহারা মরুভূমিসহ বিপজ্জনক এই রুট পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই মারা যায়।
প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় দালালের হাত ধরে ইতালি ও স্পেন প্রবেশের চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু। খবর আসে, আমেরিকায় যাওয়ার পথে বনে-জঙ্গলে দালালের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। ইউরোপে ঢোকার আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে হাজারো মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সংবাদও আসে।
ভালো পারিশ্রমিকের আশায় কয়েক বছর ধরে পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়া যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। সেখান থেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ এ প্রবণতা বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া প্রতারণার শিকার হয়ে লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের হাতে বহু অভিবাসনপ্রত্যাশী আছেন আটক অবস্থায়।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় পথে অসংখ্য নৌকা দুর্ঘটনা ও জাহাজডুবির ঘটনায় অন্তত দেড় হাজার শরণার্থী ডুবে গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৮
আপনার মতামত জানানঃ