বিশ্বে করোনার আগমনের পর থেকে যে কোনো কারণেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া কঠিনতর হয়ে উঠেছে। অভিবাসনপ্রার্থী মানুষের জন্য প্রায় আরও অসম্ভব হয়ে উঠেছে অনুমোদন পাওয়া। এজন্য অনেকেই ঝুঁকছে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় অভিবাসনের প্রতি। আর এভাবে দেশান্তরি হতে গিয়ে অনেকেই মৃত্যুর মুখে পড়ছে, কেউবা হচ্ছেন নিখোঁজ।
এদিকে স্পেনের ছিটমহল মেলিলায় ঢোকার চেষ্টার সময় সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এতে অন্তত ১৮ অভিবাসনপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন।
মরক্কোর রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা এমএপির বরাতে এ খবর জানিয়েছে এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান।
এর আগে এমএপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, ওই ঘটনায় পাঁচ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৭৬ জন। এ ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে সেখানে মরক্কোর নিরাপত্তা বাহিনীর ১৪০ জন সদস্য আহত হন। আহত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মরক্কোর নাদোর প্রদেশ থেকে এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী মেলিলা যাচ্ছিলেন। প্রাদেশিক সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে শুক্রবার রাতে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, প্রথমে পাঁচজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর কথা জানা যায়। পরে হাসপাতালে আরও ১৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর পর মোট প্রাণহানি বেড়ে হয় ১৮ জন।
এ সংঘর্ষের ফলে আহত নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য ও অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মার্চে মরক্কো ও স্পেনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য এ ধরনের গণপ্রচেষ্টা এটিই প্রথম।
স্পেনের কর্মকর্তারা বলছেন, শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশী সীমান্ত দেয়াল ভেঙে স্পেনের ছিটমহলে ঢোকার চেষ্টা করে। তাদের অধিকাংশকেই নিবৃত্ত করা গেছে। কিন্তু শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিটমহলে ঢুকতে সক্ষম হয়।
মেলিলা ও সিউটা স্পেনের দুটি ছিটমহল। গত কয়েক বছরে এ দুটি এলাকা সাব-সাহারা অঞ্চলের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে ইউরোপে ঢোকার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
মরক্কোর ভূখণ্ড থেকে পৃথক করতে স্পেনের ছিটমহল শহর মেলিলার সীমান্তে বড় বেড়া দেওয়া আছে। শুক্রবার রাতে এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী সীমানা বেড়া পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তখন মরক্কোর নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংঘর্ষ বাধে।
ছিটমহলের স্পেনের কর্তৃপক্ষ বলেছে, সীমানাপ্রাচীর টপকানোর চেষ্টা করা অভিবাসনপ্রত্যাশীর বেশির ভাগকে ফিরিয়ে দেওয়া হলেও ১৪০ জন ঢুকে পড়েছেন।
মরক্কোর ভূখণ্ড থেকে পৃথক করতে স্পেনের ছিটমহল শহর মেলিলার সীমান্তে বড় বেড়া দেওয়া আছে। শুক্রবার রাতে এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী সীমানা বেড়া পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
গত বছর স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করা অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে ৪ হাজার ৪০০ জনের বেশি সমুদ্রে হারিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে ওয়াকিং বর্ডার নামের একটি পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী। নিখোঁজ এ অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্তত ২০৫টি শিশুও আছে বলে জানিয়েছে তারা।
গোষ্ঠীটি বলছে, ২০২১ সালে সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া এই হতভাগ্যদের সংখ্যা আগের বছরের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৮ সাল থেকে ওয়াকিং বর্ডার এই সংখ্যা টুকছে, তখন থেকে আর কোনো বছরই এত অভিবাসন প্রত্যাশী নিখোঁজ হয়নি।
ওয়াকিং বর্ডার বা কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস নামে পরিচিত এই গোষ্ঠীটি সমুদ্রে বিপুল সংখ্যক অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যুর জন্য ক্রমশ বিপজ্জনক রুট বেছে নেওয়া, নিম্নমানের নৌকা ব্যবহার এবং বিপদে পড়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের সহায়তার ক্ষেত্রে কিছু কিছু নৌযানের ভয়কে দায়ী করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
স্পেনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩৯ হাজার শরণার্থী গত বছর সড়ক বা সমুদ্র পথে পৌঁছেছেন দেশটিতে। এর আগের বছরও একই সংখ্যক শরণার্থী পৌছান সেখানে।
ওয়াকিং বর্ডারস বলছে, গত বছর ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার পথে ১২৪টি জাহাজডুবির দুর্ঘটনায় ৯০ শতাংশই নিখোঁজ। আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব উপকূল থেকে কিছু দূরে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টি হচ্ছে ক্যানারি দ্বীপুঞ্জ। এগুলো স্পেনের অধীনস্থ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।
প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় দালালের হাত ধরে ইতালি ও স্পেন প্রবেশের চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু। খবর আসে, আমেরিকায় যাওয়ার পথে বনে-জঙ্গলে দালালের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। ইউরোপে ঢোকার আশায় বলকানের বরফঢাকা জঙ্গলে হাজারো মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার সংবাদও আসে। এ বছর ভূমধ্যসাগরে চার হাজারেরও বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। জুলাই মাসে প্রায় ৬০ বাংলাদেশির মৃত্যু হয় নৌকা ডুবে। অনেকেই মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তনই মূলত এই অভিবাসন প্রত্যাশার কারণ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৪
আপনার মতামত জানানঃ