প্রায় এক হাজার মাদ্রাসার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শতাধি ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’র দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তালিকা জমা দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত গণকমিশন।
গণকমিশনের সেই তালিকার সন্দেহভাজন ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধানকারী দল গঠন করা হয়েছে। এ–সংক্রান্ত একটি দাপ্তরিক চিঠি মঙ্গলবার তিন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়।
অনুসন্ধানের জন্য নিযুক্ত অন্য দুই কর্মকর্তা হলেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও উপপরিচালক মো. আহসানুল কবীর। দুদকের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল এ চিঠি পাঠান।
চিঠিতে বলা হয়, ‘….গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট টিমের মাধ্যমে বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা হতে অনুসন্ধানের সদয় অনুমোদন ও অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর প্রেরণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’ চিঠির সঙ্গে ২ হাজার ২১৫ পাতার ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’-এর তিন খণ্ড কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের উদ্যোগে ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত গণকমিশন’ সম্প্রতি ১১৬ আলেম ও ইসলামি বক্তার একটি তালিকা গত ১১ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দেয়। তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়ন এবং ওয়াজের মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করা ও ধর্মের নামে ব্যবসার অভিযোগ আনে গণকমিশন। তারা ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে।
দুদকের দাপ্তরিক চিঠিতে দেখা যায়, ১২ মে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক (দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলে) পাঠান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
এ বিষয়ে দুদকের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুদকের চেয়ারম্যান, একাধিক কমিশনার ও সচিবের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
তালিকা জমা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছিলেন, আমরা ৯ মাস তদন্ত করেছি। বহু ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নিয়েছি। ২২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন গত মার্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমরা দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। তারা মানিলন্ডারিং করেছে। জামায়াত ও ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। সেই দুর্নীতির তথ্য দিলাম। তাদেরকে বাড়তে দেওয়া যায় না।
দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য তুলে ধরে সাবেক এই বিচারপতি আরও বলেছিলেন, দুদক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন অর্ধশতাধিক ওয়াজ ব্যবসায়ীর দুর্নীতির খোঁজ শুরু করেছেন। আমাদের রিপোর্ট দুদক আইন মতে ব্যবস্থা নেবেন। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামনুল হকসহ যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে।
মানিক বলেন, আমাদের শ্বেতপত্র দুদকের কাজে আসবে। ডিসি, এসপি ও ইউএনওসহ যারা এই গোষ্ঠীদের উস্কানি দেয় তাদের নাম উল্লেখ করেছি। বিশেষ করে নোয়াখালীর এসপির বিরুদ্ধে বলেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।
ওইদিন গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা এক হাজার মাদরাসার ও ওয়াজকারীদের ওপর তদন্ত করেছি, শ্বেতপত্রে বিস্তারিত আছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও হেফাজতের কর্মকাণ্ড উঠে এসেছে। তাদের অর্থনৈতিক জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
এর কয়েকদিন পর গত ২৩ মে দুপুরে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন ইসলামি কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশের নেতারা। যেখানে ১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব ও তহবিলের উৎস, কমিটির নেতাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং গণকমিশনের শ্বেতপত্রসহ অতীতে তাদের প্রকাশিত শ্বেতপত্রের আর্থিক জোগান ও আয়-ব্যয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করার অনুরোধ করেন তারা।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে ইসলামি কালচারাল ফোরামের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছিলেন, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা কওমি মাদরাসা থেকে শিক্ষা নেয়। সরকারি অনুদান না নিয়ে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষিত জাতি গঠনে আমরা নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। অথচ আমাদের উৎসাহ না দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা এসব হীন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে সংঘাত ঘটাতে এসব কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে। যারা আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করছে, তাদের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য আমরা দুদককে আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি তাদের আয়-ব্যয় ও অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি। স্মারকলিপি প্রদানে নেতৃত্ব দেন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা গাজীপুর দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১০
আপনার মতামত জানানঃ